এপ্রিলে বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই চলছে তীব্র দাবদাহ। গরমের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে; তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎহীন পরিস্থিতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ।
লম্বা সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বাসাবাড়ির ফ্রিজও কাজ করছে না। ফলে খাবার সংরক্ষণ আর নিজেদের ঠাণ্ডা রাখতে দেশটিতে এখন বরফের চাহিদা তুঙ্গে। আর চাহিদার সঙ্গে বেড়ে গেছে দামও।
বিবিসি লিখেছে, স্থলবেষ্টিত দেশটিতে রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রা মানেই রুটি-দুধের চেয়ে বরফের দাম বেড়ে যাওয়া।
রাজধানী বামাকোতে ১৫ বছরের কিশোরী ফাতুমা ইয়াত্তারা বিবিসিকে বলে, “বরফ কিনতে বেরিয়েছি, কারণ এখন খুব গরম। কিছু জায়গায় ছোট এক ব্যাগ বরফের দাম ১০০ ফ্রাঙ্ক সিএফএ (মালির মুদ্রা)। এমনকি ৩০০-৫০০ ফ্রাঙ্ক সিএফএ-ও হয়, যা খুব ব্যয়বহুল।”
বরফের যখন এমন দাম, তখন দেশটিতে ভালো মানের রুটিই ২৫০ সিএফএ-তে পাওয়া যায়।
বিদ্যুতহীন পরিস্থিতিতে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি স্থানীয় বাসিন্দা নানা কোনাত ট্রাওরকে। বিবিসিকে তিনি বলেন, আগে সপ্তাহে কয়েকবার রান্না করতে হলেও এখন তাকে প্রতিদিনই রান্না করতে হচ্ছে।
“আমাদের সারা দিনই বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। আর খাবার নষ্ট হলে তো আপনাকে ফেলে দিতে হবে।”
বিদ্যুতের এই সমস্যা শুরু হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। শত শত মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার পরও মালির রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি দেশের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ। মালির অনেকেরই ব্যাকআপ জেনারেটর নেই। সেগুলো চালানোর খরচও অনেক।
রাতে বিদ্যুৎ নেই মানে ফ্যান-লাইট চলবে না। ফলে ঘুমাতে হবে বাইরে, যেখান স্বাস্থ্যঝুঁকির সমস্যা রয়েছে।
রাজধানী বামাকোর ইরিমাদিও জেলার যুবক সৌমাইলা মাইগা বলেন, “আমরা সত্যিই ভুগছি। রাতে তাপমাত্রা ওঠে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা অসহ্য। আমার মাথাঘোরার সমস্যা আছে। ফলে তীব্র তাপমাত্রা সহ্য করতে মাথায় পানি ঢালতে হয়।”
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা নানা কোনাত ট্রাওর বলেন, “গরমের কারণে আমাদের সবসময় বাইরে থাকতে হয়। গরম পড়লেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। এই গরম সহ্য করা মোটেও সহজ কাজ নয়।”
মালিতে মার্চেই তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছিল। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে ১০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গরমে সবথেকে শোচনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছে বয়স্ক ও শিশুরা।
অধ্যাপক তোলোবা বলেন, “এই পরিস্থিতির জন্য আমাদের আরো পরিকল্পনা প্রয়োজন, যে পরিস্থিতি আবারো তৈরি হতে পারে। এইবার গরম আমাদের অবাক করে দিয়েছে।”
প্রতিবেশী সেনেগাল, গিনি, বুরকিনা ফাসো, নাইজেরিয়া, নাইজার ও শাদও প্রাণঘাতী এই তাপপ্রবাহে আক্রান্ত। চরম তাপমাত্রার জন্য মানবঘটিত জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের বিজ্ঞানীরা।
একুশে সংবাদ/বি.নি./এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :