সুদানে গৃহযুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকট চরমে উঠেছে। প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো মানুষদের ব্যাপক অনাহার আর মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বলছে, পশ্চিম সুদানের দারফুরে মানুষের অনাহার ঠেকোনোর সময় ফুরিয়ে আসছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা গোটা জাতিকে শেষ করে দিচ্ছে।
ডব্লিউএফপি পূর্ব আফ্রিকার পরিচালক মাইকেল ডানফোর্ড শুক্রবার বলেন, খাদ্যাভাবে মানুষ বাদামের খোসা খেতে বাধ্য হচ্ছে। শিগগিরই তাদের কাছে সহায়তা না পৌঁছালে দারফুর ও সংঘাত বিধ্বস্ত সুদানের অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক অনাহার এবং মৃত্যুঝুঁকি দেখতে হতে পারে।
সিএনএন জানিয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) ২০২৩ সালের এপ্রিলে সংঘাতে জড়ালে সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। যৌন সহিংসতা, গণহত্যার মত কর্মকাণ্ড ও বেসামরিক মানুষ হত্যার ঘটনায় মানুষ দ্রুত ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবারও ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের (আইসিআরসি) দুজন চালক দক্ষিণ দারফুরে অস্ত্রধারীদের নিহত হন। আরো তিনজন কর্মী আহত হন। আরএসএফ উত্তর দারফুরের রাজধানী এল ফাশের ঘেরাও করার সময় সবশেষ সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
সুদানে জাতিসংঘের ডেপুটি হিউম্যানিটেরিয়ান কোঅর্ডিনেটর টবি হেওয়ার্ড বলেন, শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, পরিকল্পিতভাবে পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া এবং ক্রমাগত বিমান থেকে বোমা হামলা হয়েছে।
হেওয়ার্ড বলেন, এল ফাশেরই একমাত্র শহর যেটি এখনো আরএসএফ দখল করতে পারেনি। সেখানে অন্যান্য এলাকা থেকে আসা হাজারো উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে। এল ফাশেরে অন্যান্য এলাকা থেকে সহিংসতায় উদ্বাস্তু হওয়া ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে।
তবে ইউএন অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) বলছে, এল ফাশেরকে তুলনামূলক নিরাপদ মনে করা বাসিন্দারা এখন বিপদে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেখানকার ৩৬ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বৃহস্পতিবার বলেন, দুই সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া সংঘাতে এল ফাশের ও এর আশপাশে ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। পশ্চিম এল ফাশেরে এক ডজনেরও বেশি গ্রামে সম্প্রতি হামলা চালানো হয়েছে। যৌন সহিংসতা, শিশু হত্যা, বাড়িঘরে আগুন এবং অবকাঠামো ধ্বংসসহ ভয়ঙ্কর সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
সংঘাতের এমন পরিস্থিতি আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দারফুরে খাদ্য সহায়তা বিতরণে কর্মকাণ্ড থেমে গেছে। ওই অঞ্চলের ১৭ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।
ওসিএইচএ এর হিসাবে, যুদ্ধের কারণে সুদানে ৪৬ লাখ শিশুসহ ৮৭ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। ২ কোটি ৪৮ মানুষের সহায়তা প্রয়োজন।
একুশে সংবাদ/বি.নি/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :