করোনাভাইরাসের টিকার বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বীকার করে বাজার থেকে সব টিকা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ব্রিটিশ–সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিটি এই ঘোষণা দেওয়ার কিছুদিন না যেতেই এবার সামনে এল আরেক টিকার ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আর তা হলো ভারত বায়োটেকের করোনার টিকা কোভ্যাক্সিন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, কোভ্যাক্সিনের দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইচইউ) একদল গবেষক। সম্প্রতি সেই গবেষণার রিপোর্টের ফলাফলে দাবি করা হয়েছে, কোভ্যাক্সিনের যথেষ্ট ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন এমন ৯২৬ জনের ওপরে এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশের দেহে শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে চর্মরোগ, স্ট্রোক, গিলান-বারি সিনড্রোম ও রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যাডভার্স ইভেন্ট অব স্পেশাল ইন্টারেস্ট (এইএসআই) বলা হয়। এ ছাড়া নারীদের মধ্যে ঋতুস্রাবজনিত নানা জটিলতা দেখা গেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে নারীদের ক্ষেত্রে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৪.৬ শতাংশ নারীর দেহে টিকার প্রভাবে ঋতুস্রাবজনিত নানা সমস্যা দেখা গেছে। এ ছাড়া ২.৭ শতাংশ নারীর মধ্যে চোখের সমস্যা এবং ০.৬ শতাংশের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজ়মের সমস্যা দেখা যায়। ০.৩ শতাংশের স্ট্রোক এবং ০.১ শতাংশের মধ্যে গিলান-বারি সিনড্রোম (জিবিএস) দেখা গেছে। এই রোগের প্রভাবে দেহ ধীরে ধীরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি জার্নাল অব স্প্রিঞ্জার নেচারে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। রিপোর্টটি প্রকাশের পর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক বলছে, কোভ্যাক্সিন নিয়ে আগেও এমন অনেক গবেষণা করা হয়েছে। আর সেসব গবেষণায় পাওয়া গেছে, করোনার বিরুদ্ধে এই টিকা বেশ কার্যকর।
করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করলে শরীরে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়—এমন অভিযোগ কয়েক বছর ধরেই। তবে এ নিয়ে টিকা উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন চুপ করেই ছিল। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে এক মামলার জেরে সম্প্রতি মুখ খুলেছে একটি প্রতিষ্ঠান, অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তারা স্বীকার করেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
সম্প্রতি আদালতে জমা দেওয়া একটি নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে, তাদের তৈরি করোনার টিকার কারণে খুব বিরল টিটিএসের লক্ষণ দেখা যেতে পারে। টিটিএসের পূর্ণরূপ হলো থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম, যার ফলে মানুষের রক্তে প্লাটিলেট কমে যায় এবং দেহের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।
এর জেরে গত সপ্তাহে নিজেদের করোনার টিকা সারা বিশ্ব থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ–সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিটি। এতে জানানো হয়, বাজারে বর্তমানে করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বৈশ্বিকভাবে টিকার আর সেই চাহিদাও নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এরপর বৃহস্পতিবার অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, এই টিকা গ্রহণ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাট বাঁধার ডিসঅর্ডার ভ্যাকসিন–ইনডিউজড ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া অ্যান্ড থ্রম্বোসিস (ভিআইটিটি) দেখা দিতে পারে। তবে, এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিরল।
একুশে সংবাদ/আ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :