বিজেপি বিরোধীদের নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন করেও ভারতে সরকার গঠন করতে পারছে না কংগ্রেস। তবে দেশটির প্রধান বিরোধীর আসনে কংগ্রেসই। স্বাভাবিকভাবেই লোকসভার প্রধান বিরোধী দলনেতা কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। আর এই বিষয়ে পাল্লা ভারী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও দলটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা রাহুল গান্ধীর দিকেই। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ থেকেই রাহুলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে।
আর সেটির প্রভাবই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের ভোটবাক্সে দেখা গেছে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি।এই নির্বাচনে রায়বরেলি ও ওয়েনাড়- দুটি আসন থেকেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন রাহুল গান্ধী। স্বাভাবিকভাবেই এবার দেশটির সংসদেও রাহুল গান্ধী সামনে থেকে দলকে পরিচালনা করবেন; এমনটিই চান কংগ্রেস শিবিরের অনেকেই।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদের দায়িত্ব রাহুল গান্ধীকে নিতে কংগ্রেস সংসদ সদস্যরা দাবি জানাতে চলেছেন। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে খুব দ্রুত কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হচ্ছে। আর সেই বৈঠকেই বিরোধী দলনেতার নাম চূড়ান্ত হবে।
প্রসঙ্গত, ভারতের সদ্য সমাপ্ত ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। কিন্তু সবার নজরে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের ফলাফল। বিশেষ করে নজর কেড়েছে কংগ্রেসের ফলাফল। ভারতের এক সময়ের সবচেয়ে বড় এই দলটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল, তারাই আবার ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ১০০ আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। শেষবার এই দলটি আসনের নিরিখে তিন সংখ্যা পার করেছিল ২০০৯ সালে।সেই বছর ২০৬ আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করেছিলেন মনমোহন সিং।
মূলত ২০১৪ সালে ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে যে হিন্দি বলয় থেকে ভোট হারিয়েছিল কংগ্রেস, ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেখানেই আবার ধীরে ধীরে উত্থান হয়েছে দলটির। পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে। তেলঙ্গানা ও কর্নাটকে শাসক দল হওয়ার সুবিধাও কিছুটা হলেও পেয়েছে কংগ্রেস। এছাড়া মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটেও আসন ছিনিয়ে নিতে পেরেছে কংগ্রেস। এর পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবেও তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করেছে দলটি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন প্রথম এনডিএ সরকারে লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেবার রাহুল গান্ধীকে এই পদ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি গ্রহণ করেননি।
এরপর মোদির নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় এনডিএ সরকারেও লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদ গ্রহণ করেননি রাহুল। পরে এই পদে বসেন পশ্চিমবঙ্গের সংসদ সদস্য অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বর্তমানে মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বপালন করছেন এবং রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। আর অধীর চৌধুরী এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।
ফলে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদে রাহুল গান্ধীর নামই জোরালো হচ্ছে। যদিও রাহুল গান্ধী বা কংগ্রেস হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :