হামাস ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে চলমান সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।স্থানীয় সময় রোববার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
এই সফরে গ্যালান্টের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূ্র্ণ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের আন্তঃসীমান্ত উত্তেজনা বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলের শীর্ষ মিত্রের কাছ থেকে মার্কিন অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে দ্রুত অগ্রগতির আশা প্রকাশ করেছেন, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজার ক্রমবর্ধমান বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ইসরাইলের প্রবীণ ডানপন্থি নেতার সঙ্গে মতবিরোধ করেছেন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, নেতানিয়াহু অস্ত্র ইস্যুতে কী উল্লেখ করেছেন সে সম্পর্কে তারা সচেতন ছিলেন না।
রোবাবর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভাকে বলেছেন- ‘প্রায় চার মাস আগে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসরাইলে আসা অস্ত্র সরবরাহে নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমরা সব ধরনের ব্যাখ্যা পেয়েছি, কিন্তু মৌলিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।’
লেবাননের সঙ্গে ইসরাইলের উত্তর সীমান্তেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিদিন আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলি চলছে, যা সর্বাত্মক যুদ্ধের ভয় বাড়িয়েছে।
গ্যালান্ট বলেছেন, ‘গাজা ও লেবানন নিয়ে আলোচনা করবেন’। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘গাজা, লেবানন এবং অতিরিক্ত এলাকায় প্রয়োজন হতে পারে এমন যে কোনো পদক্ষেপের জন্য আমরা প্রস্তুত’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক এই যুদ্ধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলা করে। পরে গাজায় ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালিয়ে হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের অনেকাংশ ধ্বংস করে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ‘সামরিক কাঠামো, সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামোসহ গাজা উপত্যকাজুড়ে কয়েক ডজন সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।’
আট মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা যুদ্ধ চলা ইসরাইলি বিক্ষোভকারীরা বাকি জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বৃহত্তর প্রচেষ্টার দাবিতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ রাস্তায় নেমেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় তেলআবিবে একটি সমাবেশে এক লাখ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি লোকের সমাগম হয়েছিল। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটিকে সবচেয়ে বড় সমাবেশ বলে অভিহিত করেছে ইসরাইল ডেমোক্রেসি সদর দপ্তর চেক হফশি বি’আর্টজেনু।
অনেক বিক্ষোভকারী নেতানিয়াহু এবং তার অতি-ডান মিত্রদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে দেশের নিরাপত্তা এবং জিম্মিদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলার অভিযোগ করেছেন।
বিক্ষোভকারী অনেকের কাছে ‘অপরাধমন্ত্রী’ এবং ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন’ লেখা চিহ্ন ছিল। আবার কেউ কেউ ইসরাইলের গণতন্ত্রের মৃত্যুর লেবেল দেওয়ার প্রতিবাদ করতে লাল রঙে ঢেকে মাটিতে শুয়েছিলেন।
জনগণের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে- ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের সাবেক প্রধান ইউভাল ডিস্কিন নেতানিয়াহুকে ইসরাইলের ‘সবচেয়ে খারাপ প্রধানমন্ত্রী’ বলে নিন্দা করেছেন।
ইসরাইলের সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির সমীক্ষা অনুসারে, দক্ষিণ ইসরাইলে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। যার ফলে এক হাজার ১৯৪ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে অন্তত ৩৭ হাজার ৫৯৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
একটি ইসরাইলি অবরোধ গাজার ২.৪ মিলিয়ন মানুষকে বেশিরভাগ পানীয় জল, খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে বঞ্চিত করেছে।
লেবাননের হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যে বলেছে, তারা পূর্ব লেবাননে হামলা করে জামা ইসলামিয়া গ্রুপের একজন কমান্ডারকে হত্যা করেছে। হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে উত্তর ইসরাইলে সামরিকঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। তবে ইসরাইল জানিয়েছে, রোববারের হামলায় কেউ হতাহত হয়নি।
হিজবুল্লাহ কয়েক ঘণ্টা আগে একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসরাইলের অবস্থানগুলোকে তাদের স্থানাঙ্কসহ দেখায়, সর্বাত্মক সংঘাতের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, লেবাননে আক্রমণের একটি পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে।
এর পরেই হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহ হুমকি দিয়ে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইসরাইলের কোনো অংশকে রেহাই দেওয়া হবে না।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :