জাপানে বুনো ভালুকের আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করে মানুষের ওপর আক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। এর প্রতিকার হিসেবে আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করা ভালুক গুলি করার আইন সহজ করতে চাইছে জাপান সরকার। যদিও শিকারিরা বলেছেন, এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বছর এপ্রিল মাস পর্যন্ত জাপানে রেকর্ড ২১৯ বার ভালুকের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ভালুকের আক্রমণের শিকার হয়ে ছয়জন মারাও গেছেন। প্রাণঘাতী আক্রমণগুলো হয়েছে গত কয়েক মাসে। আবাসিক এলাকাগুলোতে ভালুকের বিচরণ বেড়ে গেছে। বুনো ভালুক মানুষকে তাদের শিকার ভাবছে। জাপানে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে কমছে। শিশু জন্মের হার ভয়াবহ রকম কমে যাওয়ায় দেশটিতে এখন বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। উল্টো ঘটনা ঘটছে ভালুকের বেলায়। দেশটিতে বুনো ভালুকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
সরকার এখন তাই ভালুক গুলি করার আইন সংস্কার করে তা সহজ করতে চাইছে। পার্লামেন্টের পরবর্তী অধিবেশনেই আইনটি সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেন আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার আরও সহজ হয়। সংস্কার পরিকল্পনায় যদি মানুষের হতাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তবে শিকারিদের গুলি করার অনুমতি দেওয়া হবে। যেমন ভালুক যদি কোনো বাসাবাড়িতে ঢুকে যায়। তবে বিষয়টি নিয়ে শিকারিরা চিন্তায় রয়েছেন। হোকাইদো হান্টারস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক সাতোশি সাইতো বলেন, ‘একটি ভালুকের মুখোমুখি হওয়া খুবই ভয়ের, বিপজ্জনকও বটে। আমরা গুলি করে একটি ভালুককে হত্যা করতে পারব এই নিশ্চয়তা কখনো দেওয়া সম্ভব নয়।‘যদি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আপনি গুলি করে ভালুককে আটকাতে ব্যর্থ হন...তবে সেটি পালিয়ে যাবে এবং হয়তো অন্য কাউকে আক্রমণ করবে। যদি গুলির শব্দে পালিয়ে যাওয়া ভালুক অন্য কাউকে আক্রমণ করে, তবে কে তার জন্য দায়ী হবে?’
জাপানে ভালুক নিয়ে সংকট কতটা বেড়েছে, তার উদাহরণ দিয়েছেন হোকাইদো। জাপানের সবচেয়ে উত্তরের প্রধান দ্বীপটিতে জনসংখ্যা অনেক কমে গেছে...কিন্তু সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সেখানে ১৯৯০ সালের পর ভালুকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেখানে এখন প্রায় ১২ হাজার বাদামি রঙের ভালুক রয়েছে। কালো রঙের ভালুকের চেয়ে বাদামি রঙের ভালুক বেশি আক্রমণাত্মক। জাপানে প্রায় ১০ হাজার কালো ভালুক রয়েছে। স্থানীয় সরকার থেকে ভালুক তাড়াতে নানা উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে। কেউ কেউ রোবট নেকড়ে বসাচ্ছে। সেগুলোর লাল লাল চোখ এবং ভীতিকর হাহাকার ছাড়ে। কেউ কেউ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ বছর মে মাসে উত্তরের আকিতা অঞ্চলে জঙ্গল থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা ভালুকের আক্রমণে গুরুতর আহত হন। তাঁরা যে মৃতদেহটি উদ্ধারে গিয়েছিলেন, তিনিও ভালুকের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা মামি কোনদো বলেন, ‘ভালুক মানুষের উপস্থিতি বুঝতে পারে। এরপরও তারা খাবারের সন্ধানে আসে অথবা হয়তো মানুষকেই তাদের খাবার মনে করে। একটি ভালুক একাধিক মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।’ভালুকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খাবারের খোঁজে সেগুলো পাহাড় থেকে নেমে সমতলে মানুষের আবাসের কাছে চলে আসে। একসময় মানুষ দেখে দেখে এবং শব্দ শুনে সেগুলোর ভয়ও কমে যায়। শহুরে এলাকায় ভালুক প্রবেশ করলে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এতে মানুষ হতাহত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে থাকে বলে মনে করেন জাপানের পিচচিও ওয়ার্ল্ডলাইফ রিসার্চ সেন্টারের জুনপেই তানাকা। তিনি বলেন, ‘আইনের সংস্কার করতেই হবে, তবে জরুরি পরিস্থিতিতে এটা শুধু একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। বুনো পশুদের ধরা এবং হত্যা করা সমস্যার সমাধান নয়। বরং সরকারকে ভালুকের আবাসস্থলের সুরক্ষা করতে হবে। যাতে প্রাণীগুলো নিজেদের আবাস ছেড়ে বেশি দূরে না যায়।’
একুশে সংবাদ/প্র.আ/হা.কা
আপনার মতামত লিখুন :