বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকাতে ১৯৯৫ সালে চলে গণহত্যা। এ সময় হত্যা করা হয় প্রায় আট হাজার বসনিয়ান মুসলিমকে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) এই মর্মান্তিক ও ভয়াবহ ঘটনার ২৯ তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে। নৃশংসতার জন্য দায়ীদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৫ জনকে প্রায় ৭০০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ঘটনার ২৯ বছরে বেশিরভাগ পরিবার কিছু না কিছু দেহাবশেষ শনাক্ত করে দাফন করতে সক্ষম হয়েছে। তাদেরকে গণহত্যার স্থানটির কাছেই, পোতোক্যারি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তবে, কোনো কোনো পরিবারকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, এ বছর গণহত্যার ২৯ তম বার্ষিকীতে ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে শনাক্ত করা ১৩ জন পুরুষ এবং এক কিশোরকে পূর্ব বসনিয়ার স্রেব্রেনিকার বাইরে একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ হলেন বেরিজ মুজিক। ১৯৭৮ সালে জভোর্নিক শহরে জন্ম নেয়া এই যুবকের গণহত্যার সময় বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর।
গণহত্যার ২৮ বছর পর ২০২৩ সালের মে মাসে মুজিকের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। তিনি ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে ব্রাতুনাকের কাছে সুসেস্কা এলাকায় নিহত হন। মুজিককে তার ভাই হাজিমের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। হাজিমের দেহাবশেষ ২০১৩ সালে সমাহিত করা হয়েছিল। তবে তাদের বাবা ওমর মুজিকের মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি।
এ বছর দাফন হওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হলেন হামেদ সালিক। ১৯২৭ সালে জন্ম নেয়া হামেদ ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মে জেপা শহরে নিখোঁজ হন। তখন তার বয়স ছিল ৬৮ বছর। ২০২৪ সালের মে মাসে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয় এবং সম্প্রতি তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এ বছর দাফনের আগে ১৪ জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়ে। এতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এই বছর দাফনের পরে, কবরস্থানের মোট সমাহিত মানুষের সংখ্যা ছয় হাজার ৭৬৫ জনে দাঁড়ালো।
এদিকে গত মে মাসে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ১১ই জুলাইকে সেব্রেনিৎসা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটাভুটির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জার্মানি এবং রুয়ান্ডার পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। তবে এর বিরোধিতা করে সার্বিয়া ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়। পরে সদস্যদের ভোটে এটি পাশ হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বসনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় স্রেব্রেনিৎসায় জাতিসংঘ ঘোষিত "সেইফ এরিয়া" (নিরাপদ স্থান) ছিল শান্তিরক্ষীদের তত্ত্বাবধানে। তবে সংখ্যায় অপ্রতুল হওয়ায় শান্তিরক্ষীরা বসনিয়ান-সার্ব বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যর্থ হয়। বসনিয়ান-সার্ব সামরিক কর্মকর্তা রাতকো ম্লাদিচের নির্দেশে বাহিনীর সদস্যরা বসনিয়ার নারী ও পুরুষদের আলাদা করে ফেলে। মা, স্ত্রী, কন্যা কিংবা বোনদের থেকে আলাদা হওয়া পুরুষ সদস্যরা আর পরিবারের কাছে ফিরে আসনে নি।
শুধুমাত্র হত্যা করেই থেমে থাকেনি নৃশংসতা। গণহত্যাকে ধামাচাপা দিতে পরবর্তীতে বসনিয়ান-সার্ব বাহিনীর সদস্যরা নিহতদের গণকবর খুঁড়ে দেহাবশেষগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় তারা। ফলে, একেকজনের শরীরের অংশগুলো বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে যায়।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :