প্রচণ্ড তাপ থাকা সত্ত্বেও মৃত ফিলিস্তিনি শিশুটির হাত-পা-সহ পুরো দেহটি ফ্যাকাসে আর ঠাণ্ডা। হাসপাতালের বাইরে বাবা তার মৃত ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন। বিদায় জানাতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক সেই বাবা। মৃত ছেলেটার পাশে উড়ছে মাছি।
এমন মর্মান্তিক দৃশ্য গাজায় এখন সাধারণ দৃশ্য হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি হামলায় সন্তান হারিয়ে হতবাক হাজার হাজার বাবা-মা। মৃত সেই শিশুটির বাবার নাম মাহমুদ মিকদাদ। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘সে কী দোষ করেছে, হে ঈশ্বর? সে কী ভুল করেছে?’ হাসপাতালের রেকর্ড ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় ৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েল বলেছে, হামাস জঙ্গিরা বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে লুকিয়ে আছে। তাই এই হামলা চালানো হচ্ছে।
বাবা মিকদাদের জন্য একটি নিয়মিত বিকেলই ছিল সেদিন। তিনি তার মেয়ে এবং ইয়ামামকে নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেই অ্যাপার্টমেন্টে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাস্তুচ্যুত পরিবারটি আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে। ইসরায়েলি হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শিশুটির বয়স দুই বছর হয়নি।
মিকদাদ ইয়ামামের মৃতদেহ কেন্দ্রীয় গাজার মধ্য দিয়ে নুসাইরাত ক্যাম্প থেকে নিকটবর্তী দেইর আল-বালার আল আকসা শহীদ হাসপাতালে নিয়ে যান। রক্তে ভেজা সাদা চাদরের নিচ থেকে ইয়ামামের ছোট্ট খালি দুটি পা ঝুলে ছিল। মিকদাদ এবং আরো দুইজন (একজনের মাথা ব্যান্ডেজে মোড়ানো) মর্গের বাইরে মৃত ছেলেটিকে আগলে ধরে আদর করছিলেন এবং বারবার চুম্বন করছিলেন।
তিনি কিছুক্ষণ হাসপাতালের দেয়ালে বসে কাঁদতে থাকেন। এরপর সাদা কাফনে মোড়ানো ইয়ামামের মরদেহের জানাজা পড়ান। পথচারীরা, তাদের মধ্যে কিছু শিশু নীরবে দাঁড়িয়ে তা দেখছিল তখন।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসির সম্প্রতি ঘোষিত মানবিক অঞ্চলে।
সূত্র : আল-অ্যারাবিয়া
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :