থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অভিজাত হোটেল গ্র্যান্ড হায়াত ইরাওয়ানের একটি কক্ষে ছয়জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। গত সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক এ ঘটনা বিভ্রান্তি ও রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, গ্রান্ড হায়াত ইরাওয়ান ব্যাংকক নামের ওই পাঁচ তারকা হোটেলে গোলাগুলি হয়েছে। তবে পরবর্তীকালে পুলিশ এই দাবি নাকচ করে দিয়ে জানায়, গুলিবর্ষণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগীরা বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী। তাঁরা সবাই ভিয়েতনামের নাগরিক। তাঁদের মধ্যে কারও কারও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে।
থাই প্রধানমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, ওই ছয়জন হোটেলকক্ষে ২৪ ঘণ্টা মৃত অবস্থায় পড়ে ছিলেন বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা। মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা হবে। পুলিশকে এ ঘটনার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এসব মৃত্যুর কারণ খুন। আত্মহত্যা নয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল থিটি সিয়াংসোয়াং বলেন, সাতজন হোটেলের রুম বুকিং দেন। এর মধ্যে পাঁচজন হোটেলে আসেন। একজনের হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। মৃত ব্যক্তিদের একজনের তথ্য হোটেল রেকর্ডে ছিল না। সোমবারই তাঁদের হোটেল ছাড়ার কথা ছিল।
পুলিশ প্রধান জানান, সোমবার স্থানীয় সময় বেলা দুইটার আগে হোটেলের ওই কক্ষ থেকে কোমল পানীয়ের অর্ডার দেওয়া হয়। পানীয়ের মধ্যে সন্দেহজনক উপাদান ও মৃত ব্যক্তিদের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তবে তাঁরা যেসব খাবারের অর্ডার দিয়েছিলেন, তা স্পর্শ করা হয়নি। ভুক্তভোগীরা হোটেলের ১৭ তলা থেকে ৫ম তলায় যান। সেখানকার একটি শয়নকক্ষেই তাঁদের মরদেহ দেখতে পান হোটেলের কর্মীরা। ছয়জনের মধ্যে শুধু একজনের দেহে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তদন্তকারীদের ভাষ্য, সেখানে মারামারি বা ডাকাতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শুধু একটি মরদেহে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পড়ে গিয়ে ওই ক্ষত হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ প্রধান বলেন, ওই কক্ষের বাথরুমে চা, কোমল পানীয় ও মধুর কনটেইনার পাওয়া গেছে। সব কটি কনটেইনারই খোলা অবস্থায় ছিল। দেখে মনে হচ্ছে, ওই কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুজন কক্ষের দরজা পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। তদন্তের অংশ হিসেবে ভুক্তভোগীদের ব্যাগেজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, এ ঘটনা তাঁরা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ওয়াশিংটন তাদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্র্যান্ড হায়াত ইরাওয়ান ব্যাংকক জনপ্রিয় একটি পর্যটন হোটেল। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ড ভ্রমণে এসেছিলেন। অন্যরা এর আগেও এসেছেন।
থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনা থাইল্যান্ডের ভাবমূর্তি বা পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলুক, তা তিনি চান না। থাই অর্থনীতির প্রধান ভিত হলো পর্যটন খাত। খাতটি করোনাভাইরাস অতিমারির ধাক্কা এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি।
একুশে সংবাদ/প্র.আ/হা.কা
আপনার মতামত লিখুন :