ভেনেজুয়েলায় নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছেন দাঙ্গা পুলিশের এক সদস্য। কারাকাস, ভেনেজুয়েলা। ভেনেজুয়েলায় তীব্র বিতর্ক জন্ম দেওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। দেশটিতে গতকাল বুধবার বন্ধ ছিল দোকানপাট ও গণপরিবহন। বিরোধী দলের আরও নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তারের গুজব শোনা যাচ্ছে। সহিংসতার কারণে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে।
২০১৩ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় আছেন সমাজতন্ত্রী প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। গত রোববার অনুষ্ঠিত ভোটে তাঁকে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন পরিষদ। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপালন করবেন তিনি। তবে বিরোধী নেতা–কর্মীরা বলছেন, ৯০ শতাংশ ভোটের হিসাবে দেখা গেছে, বিরোধীদলীয় প্রার্থী এডমান্ডো গঞ্জালেজ উরুতিয়া মাদুরোর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করছেন বিরোধী নেতা–কর্মীরা। গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশটিতে বিক্ষোভ হয়। পরিস্থিতি এখন সহিংস রূপ নিয়েছে। নিকোলা মাদুরো ও সামরিক বাহিনীতে থাকা তাঁর মিত্রদের দাবি, বিক্ষোভের সুযোগে একটি সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন তাঁরা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গতকাল বলেছে, নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় ভেনেজুয়েলায় ২০ জনের মৃত্যুর খবর তাদের কাছে এসেছে। কংগ্রেসের প্রধান জর্জ রদ্রিগেজসহ মাদুরোর মিত্ররা বলছেন, চলতি সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকার জন্য গঞ্জালেজ ও বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে গ্রেপ্তার করা উচিত। ভেনেজুয়েলায় এ সপ্তাহে বিরোধী দলের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন ভোলান্তাদ পপুলার পার্টির প্রধান ফ্রেডি সুপারলানো। এ অবস্থায় গঞ্জালেজ ও মাচাদোকে গ্রেপ্তার করা হলে পরিস্থিতি আরও অশান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিরোধীদলীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা দেখেছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিনিধি। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা হামলা চালিয়েছেন বলেও জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে মাচাদো বলেন, ‘এ সরকারের নির্মমতা ও নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিশ্বকে সর্তক করছি।’পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বিরোধীদলীয় দুটি সূত্র বলেছে, ভোটের সব হিসাব প্রকাশের জন্য সরকারকে চাপ দেওয়া হবে। আর সে বিষয়েই এখন বিরোধী দলগুলো বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক সংস্থা কার্টার সেন্টার গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, একে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হিসেবে ধরা যায় না। নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছিল প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পক্ষে। ঘটেছে জালিয়াতির ঘটনাও। নির্বাচনী সংস্থার ভোটের পুঙ্খানুপুঙ্খ ফলাফল প্রকাশে ব্যর্থতা ছিল আইনের ‘গুরুতর লঙ্ঘন’।এদিকে গতকাল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা এক বক্তব্যে মাদুরো বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ সব ধরনের হুমকি প্রত্যাখ্যান করছেন। ইতিমধ্যে বিতর্কিত নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি।
একুশে সংবাদ/প্র.আ/হা.কা
আপনার মতামত লিখুন :