হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনা এখন চরমে। নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে অনুতাপ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। আর তেহরান হামলা করলে তেল আবিব বসে থাকবে না বলে পাল্টা হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর ইসরাইলে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান।
মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছে তেহরান। নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে অনুতাপ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি।
এদিকে, ইরান হামলা করলে বসে থাকবে না ইসরাইল। তেহরানের হুমকির জবাবে এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেল আবিব। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। কোনো আগ্রাসন চালানো হলে, তার হিসাব ভালোমতো চুকিয়ে দেয়া হবে বলেও সতর্ক করেন নেতানিয়াহু।
অন্যদিকে ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষায় আবারও নেতানিয়াহুকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ ছাড়াও ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের সব হুমকির বিরুদ্ধে ইসরাইলের পাশে থাকার কথাও জানান তিনি।
তবে, হামাস প্রধানের মৃত্যু গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলেও উদ্বেগ জানিয়েছেন বাইডেন।
অশ্রুসিক্ত নয়নে হানিয়াকে বিদায়
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। কাতারের রাজধানী দোহার উত্তরাঞ্চলীয় লুসাইল শহরে সমাহিত হলেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনের নেতা। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২ আগস্ট) হানিয়ার দাফন অনুষ্ঠানে ঢল নামে লাখো মানুষের। হামাসের রাজনৈতিক শাখার অন্য সদস্যদের পাশাপাশি এখানেই থাকতেন হানিয়া।
জুমার নামাজের পর কাতারের জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় ইসমাইল হানিয়ার দ্বিতীয় জানাজা। দোহার বৃহত্তম ইমাম মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব মসজিদে জানাজার নামাজ আদায় করা হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা, হানিয়ার নিজ পরিবারের সদস্যরাও। কড়া নিরাপত্তায় হানিয়ার জানাজায় অংশ নেন লাখ লাখ মুসল্লিও। অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানান ভক্তরা।
ইসমাইল হানিয়ার স্মরণে মুসলিমবিশ্বের বিভিন্ন দেশে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে জানাজায় অংশ নেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য সংসদ সদস্যরা। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মসজিদে হামাস নেতার গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন দেশটির মুসুল্লিরা। তুরস্কেও মসজিদে মসজিদে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন হানিয়া ভক্তরা। ইয়েমেন, লেবানন, মালয়েশিয়াতেও হয়েছে গায়েবানা জানাজা।
গত বুধবার (৩১ জুরাই) স্থানীয় সময় ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অতিথিশালায় দেহরক্ষীসহ গুপ্তহত্যার শিকার হন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। পরে বৃহস্পতিবার দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ইমামতিতে জানাজা শেষে দাফন অনুষ্ঠান সামনে রেখে ওদিন তেহরান থেকে দোহায় পৌঁছায় ইসমাইল হানিয়ার মরদেহবাহী কফিন।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :