পাকিস্তানের প্রভাবশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর সাবেক প্রধান (ডিরেক্টর জেনারেল) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ফায়েজ হামিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।সোমবার (১২ আগস্ট) আবাসন সংক্রান্ত দুর্নীতির এক মামলায় জড়িত সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর)।
স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানে গত ৭৭ বছরের মধ্যে ৩০ বছরের বেশি সময় দেশটিতে সেনাশাসন চলেছে বা সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেই পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কোনও কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের এই ঘটনা বেশ অস্বাভাবিক।
দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান ফায়েজ হামিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, অবসর গ্রহণের পর পাকিস্তান সেনা আইনের একাধিক লঙ্ঘন করেছেন হামিদ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফিল্ড জেনারেল কোর্ট মার্শাল প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফায়েজ হামিদকে (অব.) সামরিক হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জানায়, ফায়েজ হামিদকে গ্রেফতারের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি আইএসআই-এর দায়িত্বে থাকার সময় হাউজিং সোসাইটিতে অভিযান চালান এবং তিনি সেখানকার জমি বেআইনিভাবে দখল করে নেন। এছাড়া আরো মূল্যবান সম্পদ চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়।আবেদনকারী মোইজ আহমেদ খান অভিযোগ করে বলেন, হাউজিং সোসাইটিতে অভিযানের সময় ৪ সহকর্মী এবং আমাকে ধরে নিয়ে আটক করে রাখা হয়।
এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন জানাচ্ছি, আইএসআই-এর সাবেক প্রধান (অবসরপ্রাপ্ত) ফায়েজ হামিদ এবং তার ভাই নাজাফের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজী ফায়েজ এবং আরো দুই বিচারপতির সমন্বয়ের একটি বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে বেঞ্চ অভিযোগটি আমলে নিয়ে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান ফায়েজ হামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করেন।
২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আইএসআইয়ের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ফায়েজ হামিদ।
২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা বাহিনীর আফগানিস্তান থেকে প্রস্থানের পর দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের দখল নেয়ার পরপরই কাবুলের একটি হোটেলের লবিতে চা পান করার সময় বিশ্বজুড়ে আলোচনা হয় আইএসআইয়ের সাবেক এই প্রধানকে নিয়ে।
২০০১ সাল থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনী আফগানিস্তানে অবস্থানকালীন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তালেবানকে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ করে আসছিল ওয়াশিংটন। পাকিস্তানে সাধারণত সেনাপ্রধানের পর দ্বিতীয় শক্তিশালী সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয় আইএসআই প্রধানকে।
ওই সময় হামিদকে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও বিবেচনা করা হতো। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন হামিদকে আইএসআইয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যদিও ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ইমরান খান দেশটির সামরিক বাহিনীকে তার ক্ষমতাচ্যুতির জন্য দায়ী করেন। তবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ইমরান খানের এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
সূত্র: দ্য ডন, রয়টার্স
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :