ভূমধ্যসাগরে পৃথক তিনটি অভিযানে ৩০ বাংলাদেশিসহ ১৮২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ মারি ইয়োনিও। গত শনি ও রোববার পৃথক অভিযান চালিয়ে ওই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যম ভ্যাটিকান নিউজ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় তিউনিশিয়ার উপকূল থেকে ৩৫ মাইল দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি কাঠের নৌকা দেখতে পায় উদ্ধারকারী জাহাজ মারি ইয়োনিও। ইতালির কোস্টগার্ডকে নৌকাটির অবস্থান সম্পর্কে জানায় তারা। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাটি যেকোনও সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে ভেবে নৌকায় থাকা সব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে লাইফজ্যাকেট দেন মারি ইয়োনিওর উদ্ধারকর্মীরা।
এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইতালীয় কোস্টগার্ড। নৌকা থেকে ৬৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়। তাদের সবাই উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। উদ্ধারের পর সবাইকে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়।
তার কিছুক্ষণ পর কাছাকাছি আরেকটি দুর্দশাগ্রস্ত নৌকার খবর পায় মারি ইয়োনিও। রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বিপদগ্রস্ত ওই রাবারের নৌকাটির কাছে পৌঁছান উদ্ধারকর্মীরা। নৌকাটিতে ৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন। তাদের সবাইকে উদ্ধার করে তোলা হয় মারি ইয়োনিওতে।
উদ্ধারকৃত এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগই ছিলেন ইথিওপিয়ার নাগরিক। নৌকাটি থেকে উদ্ধার করা ৫০ জনের মধ্যে ৪৩ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং নারী ছিলেন দু’জন। তাদের সবাইকে ইতালির উপকূলরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরে রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ভাসতে থাকা আরেকটি নৌকা থেকে ৬২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে মারি ইয়োনিও। তাদের মধ্যে ৩০ জন বাংলাদেশি, ২৬ জন সিরীয় ও ছয়জন পাকিস্তানি নাগরিক। তাদের ইতালির সিসিলির পোৎসালো বন্দরে নামানোর নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তৃতীয় নৌকার যাত্রীদের উদ্ধারের পর একটি আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় উদ্ধারকারী জাহাজের ডেকে। অভিবাসনপ্রত্যাশীরা স্বেচ্ছাসেবকদের জড়িয়ে ধরে তাদের উদ্ধারের জন্য ধন্যবাদ জানান। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একজন বলেন, ‘আপনারা ফেরেশতা, আমাদের সাহায্য করার জন্য সৃষ্টিকর্তা আপনাদের পাঠিয়েছেন।’
নৌকাটি তার আগের দিন সন্ধ্যায় লিবিয়ার উপকূল থেকে রওনা হয়েছিল। জাহাজে থাকা বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশীই লিবিয়ায় বন্দি ছিলেন। তাদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যায়।অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে একজন তার নিজ দেশে বিচারক ছিলেন। দামেস্কের একজন আরবি শিক্ষকও ছিলেন সেখানে। তিনি ইংরেজি ভাষার প্রথিতযশা সাহিত্যিক শেক্সপিয়ার নিয়ে আলোচনায় খুবই আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ইতালির নাগরিক সমাজ পরিচালিত বেসরকারি সংস্থা মেডিটেরানিয়ান সেভিং হিউম্যানসের ১৮তম উদ্ধার অভিযান ছিল এটি। ইতালিয়ান বিশপ’স মাইগ্রেন্টস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে সংস্থাটি কাজ শুরু করেছিল।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :