গুলি ও বোমাবর্ষণে ফের অশান্ত ভারতের মণিপুর। রাজ্যটিতে রোববার ‘সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিদের’ গুলিতে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ওই নারীর ১২ বছর বয়সী মেয়েসহ মোট ৯ জন আহত হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ। আহতদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্য রয়েছেন।রাজ্যটির স্বরাষ্ট্র দফতর পৃথক এক বিবৃতিতে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা দুইজনে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্য পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে কুকি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত কাংপোকপি জেলার নাখুজাং গ্রাম থেকে মেইতেই অধ্যুষিত ইম্ফল পশ্চিমের কাদাংবন্দের দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। এতে সুরবালা এনগাংবাম নামে ৩১ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও এক ব্যক্তি। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি। দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হয়েছেন সুরবালার ১২ বছরের মেয়েসহ মোট ৯ জন। আহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য এবং একজন সাংবাদিক রয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এ গোলাগুলি।
এদিকে এদিন মণিপুরে ড্রোনের মাধ্যমে বোমা হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। কাদাংবান্দ গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, গুলি চালানোর পাশাপাশি ড্রোনের মাধ্যমে বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ফেলা হয়েছে। ড্রোন থেকে ফেলা বোমায় এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বোমা ফেলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
মণিপুর পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বলেছে, কথিত কুকি জঙ্গিরা উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করে অসংখ্য বোমা (আরপিজি) ফেলেছে। বোমা ফেলার জন্য সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করা হয় কিন্তু মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিকদের বিরুদ্ধে বোমা হামলার জন্য ড্রোনের এই ব্যবহার উদ্বেগজনক।
কাংপোকপি হলো কুকি-অধ্যুষিত এলাকা, অন্যদিকে পশ্চিম ইম্ফল মেইতি অধ্যুষিত উপত্যকা। কুকি উপজাতি এবং মেইতি সম্প্রদায় গত বছরের মে মাস থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লড়াই করছে।
মণিপুর স্বরাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ড্রোন, বোমা এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র কাউতরুক গ্রামবাসীদের ওপর হামলার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক... কুকি জঙ্গিদের গুলিতে এক নারীসহ দুই ব্যক্তির মৃত্যু এবং অনেকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মণিপুরে স্বাভাবিক পরিবেশ ও শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার যখন সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের ওপর এই হামলার ঘটনাটিকে রাজ্য সরকার খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
এদিকে রোববারের হামলার ঘটনায় মেইতেই জঙ্গিদের দায়ী করেছে কুকিরা। কুকিদের দাবি, মেইতেইদের দিক থেকেই প্রথম গুলি চলেছে। মণিপুরের কংগ্রেস ভাইস-প্রেসিডেন্ট লামটিনথাং হাওকিপ কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত। এক্স-পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, লেইমাখং ও কাংচুপ রুটের মধ্যে মেইতেই জঙ্গিদের অতর্কিত হামলার চেষ্টা কুকি গ্রামের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিহত করেছিল, যার ফলে গুলি বিনিময় হয়।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :