বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রীষ্মের রেকর্ড গড়েছে ২০২৪ সাল। বছরটির জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মানুষের জানা ইতিহাসে এর আগে কখনও বিশ্বের তাপমাত্রায় এই পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ইউরোপের জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা সংস্থা কোপার্নিকাস।
সংস্থাটির উপ পরিচালক সামান্থা বার্গেস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল থাকে, দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে শীতকাল। এর আগে কখনও উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের জেরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা এই পরিমাণে বৃদ্ধি পায়নি। মানুষের জানা ইতিহাস অনুসারে ২০২৪ সালটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর’
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, প্রাক-শিল্পায়ন যুগে (অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে) বিশ্বের যে গড় তাপমাত্রা ছিল, বর্তমানের গড় তাপমাত্রা তার চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে এবং এটি ঘটেছে এই ২০২৪ সালে। কোপার্নিকাস এর তথ্যমতে, বিজ্ঞানীরা অন্যান্য ডেটার সঙ্গে ক্রস-চেক করে নিশ্চিত করেছেন, চলতি বছরের গ্রীষ্মটি ১৮৫০ এর প্রাক-শিল্পায়ন যুগের পর থেকে সবচেয়ে বেশি উষ্ণ ছিল।
সামান্থা বলেন, ‘দেশগুলো যদি জরুরিভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি হ্রাস করায় কাজ না করে তবে চরম আবহাওয়া ‘শুধু তীব্রতরই হতে থাকবে।’ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনকে দায়ী করেছেন তিনি।
কোপার্নিকাসের প্রতিবেদন অনুসারে, গত জুন থেকে আগস্ট বিশ্বের সব জায়গায় উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটেনি। আলাস্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ, পাকিস্তান এবং উত্তর আফ্রিকার সাহেল মরুভূমি এলাকায় চলতি বছরের গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা ছিল সেসব অঞ্চলের গড় তাপমাত্রার চেয়ে কম। অবার অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, চীনের কিছু অংশ, জাপান এবং স্পেন রেকর্ড গরম দেখেছে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত। এর মধ্যে দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ায় শীতকাল চলছিল।
ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির জেরে গরম বেড়েছে সাগরেও। কোপার্নিকাসের তথ্য অনুযায়ী গত আগস্ট মাসে সাগরপৃষ্ঠের গড় উষ্ণতা ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রেকর্ড উষ্ণতার জেরে খরা, দাবানল, ঝড়, অতিবর্ষণ, বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। একদিকে মেক্সিকো ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল গত তিন মাসে খরা এবং দাবানলের মতো দুর্যোগ দেখেছে, অন্যদিকে রাশিয়া, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও ভারতের কিছু অংশে দেখা দিয়েছে অতিবর্ষণ, বন্যা, ভূমিধসের মতো দুর্যোগ।
মানবসৃষ্টি কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ এবং সেটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাকে বর্তমানের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন সামান্থা বার্গেস।
সূত্র: বিবিসি
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :