২৪ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে । সোমবার কেরালার স্থানীয় এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাজ্যে নিপাহ ভাইরাসে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছেন। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে প্রাণ হারানো ওই শিক্ষার্থীর সংস্পর্শে আসা আরও ১৫১ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত কেরালায় নিপাহ ভাইরাসে দুজনের প্রাণহানি ঘটলো।
মহামারি সৃষ্টির ঝুঁকি থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নিপাহ ভাইরাসকে অগ্রাধিকারমূলক প্যাথোজেন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনও ভ্যাকসিন নেই এবং ভাইরাসটি থেকে নিরাময়ের কোনও চিকিৎসাও নেই। ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিকভাবে অন্তত ১৬টি প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধির তালিকা করেছে; সেই তালিকার প্রথম দিকের একটি নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ।
গত বছর ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে কেরালার কিছু অংশও রয়েছে। কেরালার উত্তরাঞ্চলীয় মালাপ্পুরাম জেলার মেডিক্যাল কর্মকর্তা আর রেনুকা বলেছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষার্থীর শরীরে জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয় এবং এর পাঁচদিন পর তিনি মারা যান। পরে তার শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষায় ওই শিক্ষার্থী নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে ৯ সেপ্টেম্বর নিশ্চিত করা হয়।
মালাপ্পুরামের এই মেডিক্যাল কর্মকর্তা রেনুকা বলেন, অন্য আরও পাঁচজনের শরীরে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তবে ওই পাঁচ ব্যক্তি নিহত শিক্ষার্থীর সাথে প্রাথমিক সংস্পর্শে এসেছিলেন কি না তা জানাননি । নিহত শিক্ষার্থীর প্রাথমিক সংস্পর্শে আসা তালিকায় ১৫১ জনকে পাওয়া গেছে। শরীরে নিপাহ ভাইরাসের কোনও উপসর্গ তৈরি হয় কি না তা জানার জন্য তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী বেঙ্গালুরু থেকে কেরালায় এসেছিলেন বলে জানান তিনি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনও চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। সংক্রামিত বাদুড়, শূকর বা অন্যান্য প্রাণীর সংস্পর্শের মাধ্যমে মানবদেহে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে।
বাদুড় নিপাহ ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। এর আগে বাংলাদেশেও খেজুরের রস পানে বাদুড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। ডব্লিউএইচও এই ভাইরাসটিকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য বৃহত্তর হুমকি শনাক্ত করলেও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর এটি মোকাবিলায় কোনও প্রকল্পই নেই, বলছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা অ্যাকসেস টু মেডিসিন্স ফাউন্ডেশন।
একুশে সংবাদ/ঢা.প./সাএ
আপনার মতামত লিখুন :