মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বেসামরিক লোকদের হত্যা ও নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে। তিন বছর আগে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে তারা। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিতে রাজপথে নেমে আসে সাধারণ মানুষ। তবে এই বিক্ষোভের জবাব সরকার দেয় ভয়ানক সহিংসতার মাধ্যমে। এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ এক সময়ে রূপ নেয় সশস্ত্র বিদ্রোহে, যার প্রভাবে এখনও বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে চলছে সশস্ত্র লড়াই। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সরকার নতুন সৈন্য সংগ্রহের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীতে নাগরিকদের নিয়োগ বাধ্যতামূলক করে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জানান, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে পাঁচ হাজার ৩৫০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। কয়েকশ ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর দূর থেকে নেওয়া সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয় সেখানে তদন্তকারীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
সংঘাতে যে প্রাণহানি হয়েছে, তার মধ্যে দুই হাজার ৪১৪ জন মারা গেছে গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাণহানির এই সংখ্যা এর আগের প্রতিবেদনের চাইতে ৫০ শতাংশেরও বেশি। শত শত মানুষ দেশটিতে বিমান হামলা ও কামানের গোলায় মারা গেছে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের অধিকার বিষয়ক অফিসের মিয়ানমার টিমের প্রধান জেমস রোডহাভের বলেন, মানবাধিকার ইস্যুতে মিয়ানমার অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। জেনেভায় সাংবাদিকদের উদ্দেশে রোডহাভের আরো বলেন, আইন ব্যবস্থাকে নিজেদের পক্ষে এনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এই সংকট তৈরি করেছে। দেশ পরিচালনার প্রতি ক্ষেত্রে করা হয়েছে দুর্বৃত্তায়ন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৪০০ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তারা এখনও সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছে।
রাজনৈতিক বিরোধিতার শাস্তি হিসেবে অনেক শিশুকে আটক করা হয়েছে, যাদের অভিভবকদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের অধিকার অফিসরে মুখপাত্র লিজ থরোসেল একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, কমপক্ষে এক হাজার ৮৫৩ জন সামরিক বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গেছে, যাদের মধ্যে ৮৮টি শিশুও রয়েছে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :