ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশে গত নির্বাচনের পর থেকেই আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারতের) সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ছিল বলেও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
এছাড়া ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে না বলেও ভারতে আশ্বস্ত করেছে বিএনপি। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএনআই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতাচ্যুত এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতের সাথে সম্পর্কের “বরফ গলতে শুরু করেছে” বলে বিশ্বাস করে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
এএনআই বলছে, সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করতে বিএনপির কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে এএনআই-এর সাথে কথা বলার সময় মির্জা ফখরুল বলেন, প্রণয় ভার্মার সঙ্গে হওয়া এই বৈঠক উভয় দেশকে অনেক ইতিবাচক দিকে নিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে গত নির্বাচনের পর থেকেই আমাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এবার আমাদের অফিসে (ভারতের) হাইকমিশনার আসায় অবশ্যই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বরফ গলতে শুরু করেছে।”
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। তিনি বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সবসময়ই খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। অবশ্যই, এটিও ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি টার্নিং পয়েন্ট।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার দল ভারতকে আশ্বস্ত করেছে যে— ক্ষমতায় এলে তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ড বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে ব্যবহার করতে দেবে না। যদিও অতীতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার রিপোর্ট রয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সাথে বৈঠক সম্পর্কে এএনআইকে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা পানি ভাগাভাগি সমস্যা, সীমান্ত হত্যা, বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার কথা উল্লেখ করেছি। একই সময়ে, ভারতের প্রধান ইস্যু ছিল নিরাপত্তা সমস্যা। আমরা আশ্বস্ত করেছি, আমরা ক্ষমতায় থাকলে, আমরা নিশ্চিত করব— এই ভূখণ্ডটি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ব্যবহার করবে না।”
এক মাসেরও বেশি আগে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এর আগে টানা কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান এবং এরপর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
হাসিনা সরকারের পতনের একদিন পরই কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক সব সময়ই খুব ভালো ছিল। কিন্তু বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমি মনে করি— বরফ গলতে শুরু করেছে। আশা করি এই সম্পর্ক আরও ভালো হবে। এইবার তারা (ভারত) আমাদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবে, বিশেষ করে ভারতকে এই দেশের মানুষের পালস্ বোঝার চেষ্টা করা উচিত। তাদের সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা উচিত নয়। তাদের উচিত (উভয় দেশের) জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা।”
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ঢাকা ও দিল্লির পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অবশ্যই, এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে এই পরিবর্তনের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ অবশ্যই খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা বিশ্বাস করি, এই বৈঠকের পর সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। জনগণের মধ্যে সম্পর্কই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার মূল চাবিকাঠি।”
এএনআই বলছে, বিএনপি বিশ্বাস করে— হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসা উচিত এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া উচিত।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমি এখনও জানি না যে, সরকার তাকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে কিনা। তবে আমি মনে করি, তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফিরে আসা উচিত এবং তার জবাবদিহি করা উচিত।”
এদিকে বিএনপি বলেছে, আগামী ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত পালিত হতে যাওয়া দুর্গাপূজা উৎসবের আগে তারা দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের ইউনিটগুলোকে সতর্ক করেছে। বাংলাদেশের ৩২ হাজার ৬৬৬টি প্যাভিলিয়নে এবার পূজা উদযাপন করা হবে।
ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে— এমন ভুল বর্ণনা নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি না, কোনও গুরুতর সমস্যা চলছে। প্রতিটি পরিবর্তনের পর কিছু সমস্যা থাকে যা পুরোটাই রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক নয়। কিন্তু, আমরা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য খুবই সজাগ। বিশেষ করে, পূজার আগে আমরা ইতোমধ্যেই সারা দেশে আমাদের ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি।”
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :