ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ছয় বছরেরও বেশি সময় পরে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান হলো। সেখানে এবার গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হবে। সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, রোববার (১৩ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি গেজেট নির্দেশিকা জারি করে জম্মু-কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতির শাসন শেষ করার ঘোষণা করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহের শেষেই জম্মু-কাশ্মীরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ওমর আবদুল্লাহ। মূলত সেই কারণেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করার কথা জানাল কেন্দ্র।
১০ বছর পরে সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচন হয় জম্মু-কাশ্মীরে। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন এনসি-কংগ্রেস জোট। এনসি বিধায়করা সর্বসম্মতিক্রমে পরিষদীয় দলের নেতা হিসাবে ওমর আবদুল্লাহকে নির্বাচিত করেন। এরপর শুক্রবার (১১ অক্টোবর) নিজের দলের ৪২ জন বিধায়ক, ছয় কংগ্রেস বিধায়ক, এক সিপিএম, এক আপ এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র বিধায়কের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি নিয়ে উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহার সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানান ওমর আবদুল্লাহ।
এবারের নির্বাচনে ৯০ সদস্য বিশিষ্ট জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের জোট ৪৮টি আসনে জিতেছে। এর মধ্যে ৪২টি আসনে জয়ী ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস জয়ী ৬টিতে। আর পিডিপি জয়ী মাত্র ৩টি আসনে। আর বিজেপি এগিয়ে ২৯টি আসনে। এদিকে সিপিএম একটি আসনে জিতেছে জম্মু-কাশ্মীরে। আম আদমি পার্টিও জয়ী একটি আসনে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপির সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। তবে সেই সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ২০১৭ সালে বিজেপি পিডিপি সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয় এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন মেহবুবা মুফতি। সেই সময় থেকেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি ছিল জম্মু-কাশ্মীরে।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্ত করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে বিজেপি সরকার। এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে (জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে) ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল।
এবারের নির্বাচনে জেতার পরই ওমর আবদুল্লা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের এই মোদি সরকারের কাছে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের দাবি জানানো বোকামি।
এ প্রসঙ্গে ওমর বলেছিলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান বদলাবে না। আমরা কখনইও বলিনি যে ৩৭০ ধারার বিষয়ে আমরা নীরব থাকব বা এটি আমাদের জন্য আর কোনও ইস্যু নয়। কিন্তু আমরা জনগণকে বোকা বানানোর জন্য প্রস্তুত নই। আমি সবসময় বলেছি, যারা এই ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে, সেই লোকদের কাছ থেকে এটি ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করা বোকামি। এটা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার মতো। তবে আমরা এই ইস্যুটিকে বাঁচিয়ে রাখব... আমরা আশা করি একদিন সরকার পরিবর্তন হবে। প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হবে এবং এমন একটি সরকার হবে যার সাথে আমরা এই বিষয়ে কথা বলতে পারব এবং জম্মু-কাশ্মীরের জন্য কিছু অর্জন করতে পারব।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :