মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত রাখাইনের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।সর্বশেষ রোববার (৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু রক্ষায় নিয়োজিত বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একটি ব্যাটালিয়নকে আটক করে সশস্ত্র গোষ্ঠী।
আরাকান আর্মির (এএ) বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী জানিয়েছে, আটক জান্তা কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুন পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী এবং সে অনুযায়ী তার শাস্তি দেওয়া হবে।
জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনটির মুখপাত্র খাইং থুখা বলেন, ‘আমরা তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করব এবং সে যে অপরাধ করেছে তার উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করব।’
ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়, বুথিডংয়ে অবস্থিত ১৫তম মিলিটারি অপারেশনস কমান্ডের (এমওসি) কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুনের নেতৃত্বে প্রায় ৭০০ জান্তা সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। ব্যাটালিয়নের পতনের আগে থুরিন তুন তার ব্যক্তিগত সহকারীসহ সৈন্যদের একটি ছোট দল নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তারা আরাকান আর্মির কাছে বন্দী হয়।
চলতি বছরের মে মাসে বুথিডং টাউনশিপের পতনের পরে, থুরিন তুন ১৫তম এমওসি মংডুতে স্থানান্তরিত করে। ৫ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নে তার ঘাঁটি থেকে তিনি আরাকান আর্মির আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মুসলিম বাহিনীসহ সৈন্যদের একত্রিত করেছিলেন।
খাইং থুখার মতে, আরাকান এএ বাহিনী পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছাকাছি পৌঁছালে কিছু জান্তা সৈন্য আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাদেরকে থুরিন তুনের নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাই তারা আত্মসমর্পণ করতে পারেনি এবং ব্যাটালিয়নের ভেতরে অনেকে আটকা পড়ে।
থুরিন তুন তার ২২তম ইনটেকে অফিসার ট্রেনিং স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন এবং ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরে মান্দালয়ে অবস্থিত সেন্ট্রাল কমান্ডে অপারেশনাল কমান্ডার হয়েছিলেন। পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৫তম এমওসির কমান্ডার নিযুক্ত হন থুরিন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, দায়িত্ব নিয়েই তিনি অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দমনপীড়ন, ভিন্নমতাবলম্বীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন এবং তাদের বিচার ও কারাদণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মংডুতে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক অশ্র প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং অস্ত্র দেওয়া, রোহিঙ্গা বাসিন্দাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ভয় দেখানো এবং মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জাতীয় ঐক্য সরকারের উপ-মানবাধিকার মন্ত্রী ইউ অং কিয়াও মোয়ে বলেন, ‘থুরিন তুন পরিকল্পিতভাবে উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছেন এবং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। তিনি অনেক রোহিঙ্গা যুবককে প্ররোচনা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করেছিলেন।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :