সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি নভোযান পাঠিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ন্যাশনাল অ্যারোনেটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। শুক্রবার সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে ৬১ লাখ কিলোমিটার (৩৮ লাখ মাইল) দূরত্বে পৌঁছেছে নাসার মহাকাশযান পার্কার।
এর আগে মনুষ্যসৃষ্ট কোনো মহাকাশযান সূর্যের এত কাছাকাছি যায় নি। নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে আগামীকাল মার্কিন সময় ভোর ৫ টার দিকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে পার্কার, তবে তার ২৪ ঘণ্টা আগেই সেই স্থানে গিয়ে সিগন্যাল দেওয়া শুরু করেছে নভোযানটি। এই অভিযানের সাফল্য নিয়ে নাসার বিজ্ঞানীরা বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
২০১৮ সালে পার্কারকে উৎক্ষেপণ করেছিল নাসা। উদ্দেশ্য ছিল সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি কোন স্থান পর্যন্ত নভোযান পাঠানো যায়, তা পরীক্ষা করা। উৎক্ষেপণের পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৬ লাখ ৯২ হাজার কিলোমিটার (৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল) গতিতে এগিয়েছে পার্কার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিমান বন্দর থেকে যদি কোনো উড়োজাহাজ এই গতিতে যাত্রা শুরু করে, তাহলে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে সেটির পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ সেকেন্ড।
সৌরমণ্ডলের প্রাণকেন্দ্র সূর্য আসলে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসে তৈরি একটি বিশাল গোলক। এটি একটি নক্ষত্র এবং আয়তনে মাঝারি আকৃতির একটি নক্ষত্র। তবে আয়তনগত বিচারে পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লাখগুণ বড় সূর্য। এই নক্ষত্রের বর্হিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১০ হাজার ডিগ্রি সেলাসিয়াস এবং কেন্দ্রস্থলের তাপমাত্রা ১ কোটি ৫০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের অভ্যন্তরে একের পর এক পারমাণবিক বিস্ফোরণই এই নক্ষত্রটির এই পরিমাণ তাপের প্রধান কারণ।
বিবিসিকে নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে রওনা দেওয়ার পর এ পর্যন্ত সূর্যকে ২১ বার প্রদক্ষিণ করেছে পার্কার। অবশেষে শুক্রবার এই নক্ষত্রটির পৃষ্ঠ থেকে ৩৮ লাখ মাইল দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পেরেছে।
ব্যাপারটি আরও স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য সূর্যের নিকটবর্তী তিন গ্রহ বুধ, শুক্র ও পৃথিবী থেকে নক্ষত্রটির দূরত্বের হিসেব নেওয়া যেতে পারে। সূর্যের নিকটবর্তী গ্রহ বুধ থেকে সূর্যের দূরত্ব ৩ কোটি ৬০ লাখ মাইল, শুক্র ও পৃথিবী থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ৬ কোটি ৭০ লাখ এবং ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল।
চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ সম্ভব হলেও প্রচণ্ড তাপের কারণে সূর্যপৃষ্ঠে অবতরণ করা অসম্ভব। শুক্রবার সূর্য থেকে যে দূরত্বে ছিল পার্কার, সেখানকার তাপমাত্রা ৯৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১ হাজার ৮০০ ফারেন হাইট)। তবে এই তাপের হিসেবে মেনেই পার্কারকে তৈরি করা হয়েছিল এবং এই পরিমাণ তাপ মোকাবিলা করেও নভোযানটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
পার্কার সূর্যপৃষ্ঠের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়, “সূর্যের আভ্যন্তরীণ শক্তির উৎস, সৌর বাতাস ও সৌর ঝড় এবং সূর্যের ভেতরকার বিভিন্ন উপাদান, যেগুলো ফোটন বা আলোর কণাকে বিপুল পরিমাণ গতিশীল করে— প্রভৃতি জানতে সূর্য সম্পর্কে একটি নিবিড় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রয়োজন ছিল, যা এখনও হয়নি। আমরা এই অনুসন্ধান শুরু করেছি এবং এক্ষেত্রে আমাদের প্রধান সহায়কের ভূমিকায় রয়েছে পার্কার।”
নাসার বিজ্ঞান বিভাগের প্রথান ড. নিকোলা ফক্স বিবিসিকে বলেন, “শত শত বছর ধরে মানুষ সূর্যকে জানার চেষ্টা করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের সৌরমণ্ডলের এই প্রাণকেন্দ্র নিয়ে খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি। আমরা যদি সত্যিই আমাদের নক্ষত্র সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান নিতে চাই, তাহলে অবশ্যই তার কাছাকাছি যেতে হবে আমাদের। এটা খুবই বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের জন্য।”
সূত্র : বিবিসি
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :