দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে গ্রেপ্তার করার উদ্দেশ্যে তদন্তকারীরা তার বাসভবনে পৌঁছেছেন। তারা ইউনের সমর্থনে বাইরে জড়ো হওয়া জনতাকে এড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।
তবে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা দল এই গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে কিনা, তা এখনও পরিষ্কার নয়। এর আগে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল গত ডিসেম্বরের শুরুতে আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষ শুক্রবার তার বাসভবনে প্রবেশ করেছে। তারা বাইরে বিক্ষোভকারীদের ভিড় এড়িয়ে ভেতরে পৌঁছালেও প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছে।
তবে এখনও স্পষ্ট নয়, প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস (পিএসএস) তার গ্রেপ্তার আটকানোর চেষ্টা করবে কিনা। এর আগে, তদন্তকারীরা অনুসন্ধান পরোয়ানা নিয়ে ইউনের অফিস ও সরকারি বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পিএসএস বাধা দিয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালত গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদন করেছে বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্তের ফলে, দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে অভিশংসন করে ক্ষমতা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এটি ছিল বর্তমান কোনও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনা।
রয়টার্স জানিয়েছে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বে থাকা দ্য করাপশন ইনভেস্টিগেশন অফিস ফর হাই-র্যাঙ্কিং অফিশিয়ালস (সিআইও) ইউন সুক ইওলকে গ্রেপ্তারে তদন্তকারীদের একটি যৌথ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই দলে পুলিশ ও প্রসিকিউটররাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৭টার কিছু পরেই তারা ইউনের বাসভবনের গেটে পৌঁছান।
এর আগে, দেশটির বার্তাসংস্থা ইয়োনহাপ সিআইওকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল যে, বর্তমান গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পরোয়ানা কার্যকর করা হলে ইউন সুক ইওলকে সিউল ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল আকস্মিকভাবে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেছিলেন। তিনি উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে কোরিয়া প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখে বিঘ্ন ঘটানো ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং উদার সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
যদিও বিরোধীদের তীব্র আপত্তি এবং সংসদে ভোটাভুটির পর, মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে সেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হতে হয়েছিল। পরে আদালত তার ওপর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল অভিশংসিত হওয়ায় তার স্থানে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করবেন। তবে, সংসদে অভিশংসিত হওয়ার পরও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে ইউন এখনও প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার কোনো নির্বাহী ক্ষমতা আর থাকবে না।
এছাড়া, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব ও ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সাংবিধানিক আদালত তার ভাগ্য নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :