কয়েক দশক ধরে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দারা বাবা-মা এবং দাদা-দাদি স্পনসরশিপ (পিজিপি) কর্মসূচির আওতায় তাদের পরিবারের সদস্যদের, অর্থাৎ বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের (পিআর) জন্য স্পনসর করতে পারতেন। তবে এই জনপ্রিয় সুযোগটি আর বর্তমানে উপলব্ধ থাকছে না।
কানাডার অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক মিলারের এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, বিদ্যমান আবেদনের ব্যাকলগ দ্রুত শেষ করার জন্য বাবা-মা ও দাদা-দাদির জন্য স্থায়ী বসবাসের স্পনসরশিপের নতুন আবেদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব (আইআরসিসি) বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছরে এই কর্মসূচির আওতায় নতুন কোনও আবেদন গ্রহণ করা হবে না। সরকারের এই পদক্ষেপের কারণে অনেক বাংলাদেশি পরিবারও অস্থিতিশীলতার মুখে পড়েছেন।
আইআরসিসি (কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব বিভাগ) বিষয়টি পরিষ্কার করে জানিয়ে বলেছে, তারা ২০২৪ সালে জমা দেওয়া আবেদনগুলোর প্রক্রিয়াকরণ চালিয়ে যাবে, তবে ২০২৩ সালের মধ্যে পিজিপি (বাবা-মা ও দাদা-দাদি স্পনসরশিপ) কর্মসূচির আওতায় নতুন কোনও আবেদন গ্রহণ করা হবে না। অতীতে এই কর্মসূচির মাধ্যমে কানাডার স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য স্পনসর করতে পারতেন।
কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব বিভাগ (আইআরসিসি) এখন পিজিপি কর্মসূচির পরিবর্তে সুপার ভিসা কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছে। এই ভিসার আওতায়, স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের আত্মীয়দের পাঁচ বছর পর্যন্ত কানাডায় বসবাসের অনুমতি দিতে পারবেন।
আইআরসিসি জানিয়েছে, এটি দেশটিতে অভিবাসীদের সংখ্যা হ্রাসের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, ২০২৫ সালে কানাডায় পিআর (স্থায়ী বসবাস) বরাদ্দের হার ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে। চলতি বছরে, আইআরসিসি পিজিপি কর্মসূচির আওতায় ২৪ হাজার ৫০০ জনের আবেদন নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা করেছে, তবে আগামী কয়েক বছরে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
• কানাডার কঠোর অভিবাসন নীতি
কানাডা ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসী-বান্ধব নীতি অনুসরণ করে আসছে, তবে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নেতৃত্বাধীন সরকার বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এর ফলে আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় চাপ মোকাবিলার জন্য দেশটির অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন এনেছে।
কানাডার সংবাদমাধ্যম কানাডা গেজেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে চলতি বছরের মধ্যেই ১২ লাখেরও বেশি অস্থায়ী বাসিন্দা কানাডা ছাড়তে বাধ্য হতে পারেন।
এছাড়া, কানাডার বার্ষিক পিআর (স্থায়ী বসবাস) কোটা আগে ৫ লাখ নির্ধারিত ছিল, তবে চলতি বছরে তা কমিয়ে ৩ লাখ ৯৫ হাজার করা হয়েছে। এই সংখ্যা ২০২৬ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার এবং ২০২৭ সালে ৩ লাখ ৬৫ হাজারে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
হ্রাসকৃত কোটার মধ্যে ২০২৫ সালে শুধুমাত্র ৯৪ হাজার ৫০০টি ভিসা পারিবারিক স্পনসরশিপের জন্য বরাদ্দ করা হবে, যার মধ্যে ৭০ হাজার পিআর-ধারীদের স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :