গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস-ইসরায়েল আলোচনার শেষপ্রান্তে পৌঁছেছে। কাতারের দোহায় চলমান সপ্তাহব্যাপী আলোচনায় যেকোনো সময় নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিবিসি, রয়টার্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) শেষ দিনের মতো বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন মধ্যস্থতাকারীরা। এর আগে, স্থানীয় সময় সোমবার (১৩ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি হবে। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ইসরায়েল ও হামাস।
একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি টানার বিষয়ে তোড়জোড়ের সঙ্গে কাজ করছে তার প্রশাসন। যুদ্ধবিরতি হলে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির পাশাপাশি ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা করবেন বলেও জানান তিনি।
জো বাইডেন বলেন, বেশ কয়েক মাস আগে আমি হামাস-ইসরায়েলের ভেতর যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তা একেবারে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। অবশেষে এটি ফলপ্রসূ হতে যাচ্ছে। এত বছর মানুষের সেবা করে আমি একটা বিষয়ে শিখেছি। তা হলো কখনও আশা ছাড়তে নেই।
একই সুরে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও। তার দাবি, আগের যেকোন সময়ের চেয়ে এবার অনেক বেশি এগিয়েছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি আলোচনা। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বেশ আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্র।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি সফল হলে সেটি তিন ধাপে বিভক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। প্রথম ভাগে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করছে তেল আবিব।দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে চুক্তি কার্যকরের ১৬তম দিনে। এ সময় জোর দেওয়া হবে সব নাগরিক এবং বন্দি সেনাদের মুক্তির বিষয়ে। তৃতীয় এবং শেষ ধাপে থাকবে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির পরবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি।
অবশ্য, যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও গাজায় এখনও বর্বর হামলা-অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে দখলদার বাহিনীর সবশেষ হামলায় আরও ১৯ ফিলিস্তনির প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার হয়ে অন্তত ৪৬ হাজার ৫৮৪ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন গত ১৫ মাসে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে হামাস উৎখাতের নামে গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলা-অভিযানে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন আরও অন্তত এক লাখ ৯ হাজার ৭৩১ লোক, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ২০ লাখ বাসিন্দা।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর হামলা-অভিযানের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে আছে গাজার প্রতিটি বাসিন্দা।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :