ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। এদিকে, মেয়াদ শেষে বিদায় নেবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন ৮২ বছর বয়সী জো বাইডেন।
প্রাইমটাইমে প্রচারিত এ ভাষণে বাইডেন বলেন, “আমাদের দেশে সম্পদ, ক্ষমতা এবং প্রভাবের একটি সংকটপূর্ণ অলিগার্কি বেড়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে। ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রীকরণ এখন খুব অল্পসংখ্যক অতিধনী ব্যক্তিদের হাতে চলে গেছে।”
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অতি-ধনী ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আমেরিকানদের একটি ‘অতি-ধনী প্রযুক্তি শিল্প কমপ্লেক্স’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা অর্জন করতে পারে, যা দেশের জন্য গুরুতর হুমকির কারণ হতে পারে। বাইডেন আরও বলেন, “এই প্রযুক্তি কমপ্লেক্সের কার্যক্রম আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং এটি জাতির জন্য এক অদূর ভবিষ্যতে প্রকৃত বিপদ ডেকে আনতে সক্ষম।”
বাইডেন তাঁর ভাষণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফ্ল্যাটফর্মগুলোকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, আমেরিকানরা ভুলতথ্য ও অপতথ্যের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে, যা ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফ্ল্যাটফর্মগুলোর জবাবদিহির আহ্বান জানান তিনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) বিপুল সম্ভাবনা দেখলেও এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন বাইডেন। তিনি বলেন, এআই বিপুল সম্ভাবনা উপহার দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রহরা না থাকলে তা নতুন হুমকির জন্ম দিতে পারে।
রূপান্তরমূলক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই চীনের ওপর নেতৃত্ব নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাঁর অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলেছে প্রভাবশালী শক্তি। ক্ষমতা, মুনাফার স্বার্থে তারা এই কাজ করছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা নৃশংস সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এই প্রসঙ্গটিও বাইডেনের ভাষণে উঠে এসেছে।
বাইডেন দাবি করেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তিনি গত বছরের মে মাসে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখন যে চুক্তিটিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে, তা তাঁর প্রস্তাবিত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই করা।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি তাঁর প্রশাসনের সাফল্যের জন্য গর্বিত।
বাইডেন বলেন, তাঁরা একত্রে যা করেছেন, তার সম্পূর্ণ প্রভাব অনুভব করতে সময় লাগবে। কিন্তু বীজ রোপণ করা হয়েছে। সেগুলো বেড়ে উঠবে, দশকের পর দশক ধরে প্রস্ফুটিত হবে।
আশাবাদী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাইডেন তাঁর ভাষণ শেষ করেন। তিনি আমেরিকানদের দেশ সম্পর্কে তাঁর আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমেরিকানদের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, এখন দেশের জনগণের প্রহরীর ভূমিকা পালন করার পালা।
২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বাইডেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বাইডেন লড়তে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।
সূত্র: রয়টার্স ও সিএনএন
একুশে সংবাদ/ব.জ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :