ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রবেশের জন্য ১ হাজার ৩০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র রোজালিয়া বোলেন।
তিনি সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে জানান, “ইউনিসেফের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৩০০ ট্রাক প্রস্তুত রয়েছে। এর পরে আরও ৭০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের জন্য প্রস্তুত করা হবে। আমরা একা নই, অন্যান্য সংস্থাও মানবিক সহায়তা পাঠানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে।”
ইউনিসেফের এ মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে অনেক মানুষ আল-মাওয়াসির এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি শুরু হলে তারা আবার নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিস্থিতির সমন্বয় করে ইউনিসেফ তাদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের চুক্তি অনুযায়ী, গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষ ধীরে ধীরে সেখানে ফিরে যেতে পারবেন। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরই সাধারণ জনগণ ওই এলাকায় যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সতর্কতা হিসেবে গাজার সিভিল ডিফেন্স সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র বলেছেন, “তাড়াহুড়া করে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। সেখানে অবিস্ফোরিত বোমা বা অন্যান্য বিপজ্জনক যুদ্ধাস্ত্র থাকতে পারে, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।”
তিনি জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলের ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব ধ্বংস হওয়া বাড়িও জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে কাল রোববার যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে ৩৩ জনকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে নিজেদের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থেকে ১ হাজার ৯৭৭ জনকে ছেড়ে দেবে দখলদার ইসরায়েলি সরকার।
বিরতির প্রথম দিন ৩ ইসরায়েলির বদলে ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৬৯ জন নারী, ১৬ জন পুরুষ এবং ১০ জন শিশু রয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ৯৫ জনের নামও প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। চুক্তির শর্ত অনুসারে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের স্থায়ীত্ব হবে অন্তত ৪২ দিন, তবে প্রয়োজনে এই মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধবিরতির যে চুক্তিটির অনুমোদন দিয়েছে হামাস এবং ইসরায়েল— সেটি তিন পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে যে ৩৩ জনকে মুক্তি দেবে হামাস, তাদের মধ্যে নারী, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, যে ১ হাজার ৯৭৭ জন ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দেবে, তাদের মধ্যে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি আছেন ২৯০ জন এবং অন্যান্য অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাবাসের সাজাপ্রাপ্ত রয়েছেন ১ হাজার ৬৮৭ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চুক্তির শর্ত অনুসারে, আগামী ৬ সপ্তাহে সাত দফায় মুক্তি দেওয়া হবে এই ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মি এবং ১ হাজার ৯৭৭ জন ফিলিস্তিনিকে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :