গাজায় যুদ্ধবিরতির পর পশ্চিম তীরের চেকপোস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে সমগ্র পশ্চিম তীর জুড়ে যাত্রীদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগছে।ফিলিস্তিনি অঞ্চলের তাইবেহে থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই ইসরাইলি সেনারা রাতের বেলায় তাদের গ্রাম তাইবেহের প্রবেশপথে চেকপোস্ট স্থাপনের আগেফাদারবাশার বাসিল তার উপাসনালয় থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবাধে আসা-যাওয়া করতেন।রামাল্লাহর উত্তরে অবস্থিত খ্রিস্টান পল্লীর ক্যাথলিক পুরোহিত বাসিল বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে আমাদের তাইবেহের প্রবেশ পথে জেরিকো, জেরুজালেম, নাবলুস যাওয়ার রাস্তাগুলোয় লোহার গেট দেখে আমরা অবাক হই।’
২০০০ সালের গোড়ার দিকে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করে বাসিল এএফপি’কে বলেন, ‘দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর থেকে আমরা চলাচলের দিক থেকে কখনো এত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি।’
তিনি বলেন, পশ্চিম তীরের বেশিরভাগ অংশ এবং ফিলিস্তিনি নগরী ও শহরের প্রবেশ পথের মধ্যে অবস্থিত বিচ্ছিন্নকারি বাঁধ বরাবর চেপোস্টগুলো অতিক্রম করতে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধের সূত্রপাতকারী হামাসের আক্রমণের পরে যুদ্ধ শুরুর পর অপেক্ষার দীর্ঘ সময় পর এখন পশ্চিম তীরের শহর ও গ্রামের মধ্যে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেটজ জানায়, যুদ্ধবিরতির প্রথম ৪২ দিনে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ সামরিক বাহিনীকে পশ্চিম তীরের চারপাশে কয়েক ডজন চেকপোস্ট বসানেরা নির্দেশ দিয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রাচীর প্রতিরোধ কমিশন জানায়, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিম তীরে ১৪৬টি লোহার গেট তৈরি করা হয়, যার মধ্যে ১৭টি কেবল জানুয়ারিতে তৈরি হয়েছে। যার ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মোট রাস্তা অবরোধের সংখ্যা ৮৯৮টিতে পৌঁছেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিরজেইত শহরে সচারাচর খোলা রাস্তা বন্ধ থাকায় বাড়ি ফেরার পথে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে ছিলেন আনাস আহমেদ। তিনি বলেন, তারা এখনো আমাদের গেট দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছে। এটাই বড়ই নির্মম।’
রামাল্লায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদ বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হওয়ার মুহূর্তে সবকিছু ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তিত হয়েছে। ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনি জনগণকে চড়া মূল্য দিতে বাধ্য করছে।’
ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র নাদাভ শোশানি চেকপোস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের গ্রেপ্তারের জন্য এগুলো ব্যবহার করেছ।
তিনি বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘হামাস যোদ্ধারা যাতে পালিয়ে না যায় আমরা তা নিশ্চিত করছি তবে বেসামরিক লোকেরা যেখানে খুশি বেরিয়ে যেতে এবং তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা পেতে পারে।’
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামাল্লাহ এলাকার আরেক বাসিন্দা, নতুন পরিবেশকে খাঁচার প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘এটা অনেকটা খাঁচায় থাকা বন্দি খরগোশের মতো। সকালে তারা বাইরে যেতে পারে, কাজ করতে পারে, তারপর সন্ধ্যায় তাদের খাঁচায় অর্থাৎ বাড়ি ফিরতে হয়।’
সালফিট ও রামাল্লাহর মধ্যে প্রতিদিন যাতায়াতকারী সরকারি কর্মচারী শাদি জাহোদ এএফপি’কে বলেন, ‘এতে করে তারা যেনো আমাদের একটি বার্তা পাঠাচ্ছে: তোমরা শহরে আটকে থাকো, কোথাও যেও না।’
গাজা যুদ্ধবিরতি অনুমোদনের আগে ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা তার যুদ্ধের লক্ষ্যে পশ্চিম তীরে ‘নিরাপত্তা জোরদার’ করার উল্লেখ করেছে বলে জানা গেছে।
ইসরাইলি মানবাধিকার গোষ্ঠী বিতসেলেম মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইল গাজা থেকে পশ্চিম তীরে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য এলাকায় মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :