দীর্ঘ সময় পর ভারতীয়দের জন্য ভিসা প্রদান শুরু করেছে বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন পুনরায় খুলে দেয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে ভিসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ডেপুটি হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার পর বাংলাদেশ ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। এ সময় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয়, ফলে ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের সুযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখন সেই পরিষেবা পুনরায় চালু করা হয়েছে।
আগরতলার সহকারী হাইকমিশন থেকে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দারা সাধারণত বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য ভিসার আবেদন করে থাকেন, এবং গড়ে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নতুন করে হাইকমিশন খুলে দেয়া হওয়ার পর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিসার জন্য আবেদন করতে শুরু করেছেন।
এক ভারতীয় আবেদনকারী, সুনন্দা দেবনাথ, গণমাধ্যমে জানান, "গত কয়েক মাস ধরে ভিসা পরিষেবা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি। ফোনে যোগাযোগ রাখা সব সময় সম্ভব হয় না। দীর্ঘদিন পর তাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।"
এ বিষয়ে, সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা নবীন রায় জানিয়েছেন, ভিসা পরিষেবা পুনরায় চালু হওয়ার খবর এখনও অনেকে জানেন না। প্রথম দিনে মাত্র ১০০টি আবেদন জমা পড়লেও, দ্বিতীয় দিন থেকেই তা বেড়ে ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, ভিসা পরিষেবা বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ আবেদন জমা পড়ত। এবং অনুমান করা হচ্ছে যে এই সংখ্যা শিগগিরই আরও বাড়বে।
ভিসা পরিষেবা পুনরায় চালু হওয়ায় শুধু পর্যটকরা নন, খুশি হয়েছেন ভিসার ফরম পূরণের কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসায়ী রতন দেবনাথ বলেন, `ভিসা পরিষেবা বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন এটি চালু হওয়ায় মনে হচ্ছে আমরা ‘অক্সিজেন’ ফিরে পেয়েছি। আশা করছি, ধুঁকতে থাকা ব্যবসা ফের ঘুরে দাঁড়াবে।`
হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবেদন জমা দেয়ার অন্তত তিন দিন পর ভিসা দেয়া হবে। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই সময়সীমা বাড়তে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পর্যটন খাতের প্রভাব: গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়, যার ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যটনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কমে গেছে।
ভারতের পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশি পর্যটকদের অবদান প্রায় ২৩ শতাংশ। বিশেষত চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে ভ্রমণ করেন। তবে এখনো পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেওয়া শুরু করেনি, যার ফলে এ খাতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
একুশে সংবাদ/চ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :