ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে আরএসএফ-এর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান সেলিয়া মের্সিয়ের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দ্রুত বাড়ছে।"
"২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা আশা করেছিলাম যে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তবে বাস্তবে তা ঘটেনি।"
আরএসএফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে শারীরিক হামলার শিকার হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে, প্রতিবাদকারীরা সরাসরি বার্তাকক্ষে ঢুকে হামলা চালাচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
৫ ফেব্রুয়ারি: বিএনপির প্রায় ২০ জন সমর্থক সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এটিএন নিউজ-এর সংবাদকর্মী জাভেদ আক্তারকে আক্রমণ করেন। তাকে সাহায্য করতে গেলে এনটিভির হাসান জাবেদ এবং দীপ্ত টিভির আজিজুল ইসলাম পান্নু-কেও মারধর করা হয়। ওই সময় সাংবাদিকরা ১৯৯৪ সালে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা সংক্রান্ত মামলার রায় কাভার করছিলেন।
৬ ফেব্রুয়ারি: ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ও স্মৃতি জাদুঘর ভাঙার ঘটনা কাভার করার সময় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মোহাম্মদ ওমর ফারুক, একাত্তর টিভির সাইয়েদ মাইনুল আহাসান মারুফ-সহ অন্যান্য সাংবাদিকদের ওপর বিক্ষোভকারীরা হামলা চালায়। তবে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
৯ ফেব্রুয়ারি: দ্য রিপোর্ট লাইভ-এর কাওসার আহমেদ রিপন, কালের কণ্ঠ-এর আসিফ-উজ জামান ও মুহাম্মদ মাহাদি, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর আজহার রাকিব, জাগো নিউজ-এর মোহাম্মাদ রাদওয়ান এবং ব্রেকিং নিউজ-এর শিমুল খান পুলিশের হামলার শিকার হন। তারা জানান, প্রেস কার্ড দেখানোর পরও পুলিশ তাদের লাঠি দিয়ে পেটায়, ঘুষি ও লাথি মারে।
ঢাকার বাইরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুধু রাজধানী নয়, ঢাকার বাইরেও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
৩ ফেব্রুয়ারি: শরীয়তপুরে সমকাল-এর প্রতিনিধি সোহাগ খান-এর ওপর হাতুড়ি ও ছুরি দিয়ে হামলা চালানো হয়। স্থানীয় একটি ক্লিনিকের অবহেলা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ক্লিনিক মালিকের ভাই ও তার সহযোগীরা এই হামলা চালান।
এই ঘটনায় আরও তিন সাংবাদিক আক্রান্ত হন। এসময় সোহাগ খানের সহায়তায় নিউজ২৪-এর বিধান মজুমদার ওনি, বাংলা টিভির নয়ন দাস এবং দেশ টিভির শফিউল ইসলাম আকাশ এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান: আরএসএফ-এর দক্ষিণ এশিয়া প্রধান সেলিয়া মের্সিয়ের বলেন, `সহিংসতার এই অগ্রহণযোগ্য চক্র বন্ধ করতে এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা (অন্তর্বর্তী) সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।`
ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়। এর তিনদিন পরে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়।
একুশে সংবাদ/চ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :