ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সম্প্রতি প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশের চিকেন’স নেক এলাকাসংলগ্ন অংশে (শিলিগুড়ি) পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কর্মকর্তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো বিরোধী শক্তি এই অঞ্চলকে অপব্যবহার করে ভারতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর সুযোগ না পায়।
এএনআইয়ের সম্পাদক স্মিতা প্রকাশ সেনাপ্রধানের কাছে জানতে চান, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও আইএসআই কর্মকর্তাদের ভারতীয় সীমান্তের সংবেদনশীল এলাকাগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ সংলগ্ন চিকেন’স নেক অঞ্চলে ঘন ঘন উপস্থিতির বিষয়ে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে কি না। এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করেছে ইকোনমিক টাইমস এবং টাইমস অব ইন্ডিয়া।
জবাবে জেনারেল দ্বিবেদী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি একবার সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে একটি নির্দিষ্ট দেশের (পাকিস্তান) নাম উল্লেখ করেছিলাম। এখন সেই দেশের কর্মকর্তারা যদি অন্য কোনো জায়গায় অবস্থান নেয় এবং সেই জায়গাটি আমাদের প্রতিবেশী হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমি উদ্বিগ্ন থাকব। কারণ, আমরা চাই না, তারা ওই ভূখণ্ডকে অপব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করুক।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন জেনারেল দ্বিবেদী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ধরন নির্ভর করবে দেশটিতে নির্বাচিত সরকার আছে কি না, তার ওপর। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘প্রশাসন কেমন হবে, এটি নির্ধারণের প্রশ্ন তখনই আসবে, যখন সেখানে একটি নির্বাচিত সরকার থাকবে।’
তবে সামরিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন। তার মতে, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। আমাদের যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই দুই দেশের মধ্যে মতবিনিময় সম্ভব হয় এবং আমরা তা করছি।
কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা পাকিস্তান এখনো বুঝতে পেরেছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান মজার ছলে বলিউডের এক বিখ্যাত সিনেমার প্রসঙ্গ টানেন।
তিনি বলেন, ‘দেব আনন্দজির একটি সিনেমা আছে, সম্ভবত (আর.কে.) নারায়ণের লেখা বই থেকে নির্মিত। সিনেমার শেষের দিকে দেব আনন্দ যখন সাধু হয়ে যান, তখন এক পাগল ঘোষণা দেয় যে, যতক্ষণ না বৃষ্টি হয়, ততক্ষণ সে না খেয়ে থাকবে। পাকিস্তানের অবস্থাও অনেকটা তেমনই। একবার তারা কাশ্মীর নিয়ে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছে, এখন সেই পথ থেকে বেরিয়ে আসার আর কোনো উপায় নেই। তাই তারা বারবার একই পথ অনুসরণ করছে-কাশ্মীর, কাশ্মীর এবং কাশ্মীর।
জেনারেল দ্বিবেদী আরও বলেন, পাকিস্তানের সংকট কেবল কাশ্মীরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ভারতবিরোধী মনোভাবের একটি অংশ। তিনি বিখ্যাত লেখক রবার্ট কাপলানের ‘The Revenge of Geography’ বইয়ের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সিন্ধু নদের দুই পাশ কি কখনো এক হতে পারে? এটি গভীরভাবে ভাবার মতো একটি প্রশ্ন।’
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হলে এমন একটি সাধারণ এজেন্ডা প্রয়োজন, যা তাদের জনগণকে একত্রে ধরে রাখতে পারে। ‘পাকিস্তানের জনগণের ভাষা কি এক? সংস্কৃতি কি অভিন্ন? কী তাদের মিল আছে? একমাত্র মিল হলো ভারতবিরোধী মনোভাব। তাই তারা কাশ্মীর ইস্যুকে সামনে এনে সব সময় জনগণের দৃষ্টি সেদিকে রাখার চেষ্টা করে।’
সেনাপ্রধানের বক্তব্য স্পষ্ট করেছে যে, পাকিস্তান শুধুমাত্র কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতবিরোধী অবস্থান নিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বৃহত্তর পরিসরে এটি ভারতের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলের অংশ। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ভারতীয় প্রতিরক্ষা মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
একুশে সংবাদ/চ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :