মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা শুক্রবার বলেছে, বুরকিনা ফাসোর ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারকে এই মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখানো বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যার ঘটনায় জড়িতদের ’নিরপেক্ষভাবে তদন্ত এবং যথাযথভাবে বিচার’ করতে হবে। আবিদজান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
এইচআরডব্লিউ-এর বিবৃতিতে উদ্ধৃত ভিডিওলোতে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সোলেনজো এবং এর আশেপাশে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এবং হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কয়েক ডজন মৃতদেহ দেখা গেছে। যা কর্তৃপক্ষ কারচুপিমূলক বলে উড়িয়ে দিয়েছে।মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা বলেছে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী, শিশু এবং বয়স্ক। কর্তৃপক্ষের উচিত নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা এবং যথাযথভাবে গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ী সকলের বিচার করা।
এইচআরডব্লিউ-এর সিনিয়র সাহেল গবেষক ইলারিয়া অ্যালেগ্রোজ্জি বলেছেন, বুরকিনা ফাসোতে সরকারপন্থী মিলিশিয়া কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যার ভয়াবহ ভিডিওগুলো এই বাহিনীর জবাবদিহিতার অভাবকে তুলে ধরে। ’সোলেনজোর মতো নৃশংসতার জন্য দায়ীদের শাস্তি দিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মিলিশিয়া গোষ্ঠীর আক্রমণ বন্ধ করার জন্য বুরকিনা কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
’স্থানীয় একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে যে, সরকারি বাহিনী এবং মিত্র মিলিশিয়ারা ১০ থেকে ১১ মার্চের মধ্যে ফুলানির পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে। সূত্র অনুসারে, অপরাধীদের মধ্যে ১৮তম র্যাপিড ইন্টারভেনশন ব্যাটালিয়নের সেনাদের পাশাপাশি মিত্র আত্মরক্ষা মিলিশিয়ার সদস্যরাও ছিল।
র্যাপিড ইন্টারভেনশন ব্যাটালিয়নগুলো হল বিশেষ বিদ্রোহ-বিরোধী ইউনিট যা জান্তা নেতা ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রোরের কর্তৃক তৈরি করা হয়েছিল। যিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।এইচআরডব্লিউ ভিডিও ফুটেজ গুলোতে ৫৮ জনের মৃতদেহ দেখা গেছে। তবে মৃতদের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ একে অপরের ওপরে মৃতদেহ স্তূপ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী রিমতালবা জিন ইমানুয়েল ওয়েদ্রাওগো শুক্রবার বলেছেন, ’এগুলো যুদ্ধরত বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে কৌশলী পদক্ষেপ।’ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বর্তমানে চলছে।
ওয়েদ্রাওগো নতুন র্যাপিড ইন্টারভেনশন ব্যাটালিয়ন এবং বেসামরিক প্রতিরক্ষা মিলিশিয়া তৈরির ঘোষণাও দেন। তিনি বলেন, সরকার জিহাদি সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ১৪ হাজার সেনা এবং হাজার হাজার বেসামরিক সহায়তা কর্মী নিয়োগ করবে।স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ভিডিওগুলোতে ধারণ করা রক্তপাত মার্চের শুরুতে ওই এলাকায় একটি হামলার পরের ঘটনা।সূত্রটি আরো জানিয়েছে অপরাধীরা ফুলানি সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, সোলেনজো ছেড়ে যাওয়ার সময় তারা ১৮তম র্যাপিড ইন্টারভেনশন ব্রিগেডের সেনা এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবকের হাতে ধরা পড়ে। তাদের নির্যাতন ও গণহত্যা করা হয়।
সংঘাত পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এসিএলইডি-এর মতে, ২০১৫ সাল থেকে, বুরকিনা ফাসো জুড়ে অস্থিরতার কারণে ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা উভয়ই রয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ভুক্তভোগী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যারা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় আনার পর মারা গিয়েছিলেন।
এইচআরডব্লিউ-এর মতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে, বুরকিনাফ সেনাবাহিনী এবং এর সহযোগীরা ’কমপক্ষে ১ হাজার বেসামরিক’ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :