গত বছরের জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করা সাহসী নারী শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের "আন্তর্জাতিক সাহসী নারী" পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এই মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক মার্কিন পুরস্কারটি "ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড" নামে পরিচিত।
এই বিষয়টি সম্প্রতি উঠে এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষ্যে যারা কাজ করছেন, তাদের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীরা শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষে নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩১ মার্চ) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস।
এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনবিরোধী আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে অংশ নেওয়া নারীদের কৃতিত্ব সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন, "আজ – আপনার উপস্থাপনার শুরুতে – আপনি উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশের গর্বিত মেয়েরা আগামীকাল পুরস্কার গ্রহণ করে সম্মানিত হচ্ছেন। বাংলাদেশি মেয়েরা এই পুরস্কার পাচ্ছেন, এবং এই মঞ্চ থেকেই তারা সেটি গ্রহণ করবেন। ২০২৪ সালের আন্দোলনের জন্য বাংলাদেশি মেয়েরা এই পুরস্কার পাচ্ছেন, যা ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত। আপনার কি এই বিষয়ে কোন মন্তব্য আছে?"
জবাবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, "তারা আগামীকাল পুরস্কার পাচ্ছেন। আমি এখানে আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কারের বিষয়ে কথা বলব। তবে, বাংলাদেশের রাজনীতির প্রকৃতি সম্পর্কে প্রশ্নের শেষ অংশ নিয়ে আমি কোন অনুমান করতে পারব না।"
তিনি আরও বলেন, "আমি আবারও উল্লেখ করতে চাই যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আগামীকাল এখানে পররাষ্ট্র দপ্তরে ১৯তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। ২০২৫ সালের এই অনুষ্ঠানে আটজন অসাধারণ নারীকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং বিশ্বজুড়ে ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ আইডব্লিউওসি পুরস্কার প্রাপকদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে, যারা সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য কাজ করছেন।"
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র আরও বলেন, "মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আইডব্লিউওসি পুরস্কার – যা আমরা বলি – বিশ্বজুড়ে সেইসব নারীদের স্বীকৃতি দেয়, যারা ব্যতিক্রমী সাহস, শক্তি এবং নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীরা শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষে কাজ করেছেন। তাদের প্রচেষ্টার ফলে তারা প্রায়শই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ব্যক্তিগত ঝুঁকির সম্মুখীন হন।"
ট্যামি ব্রুস আরও বলেন, ২০০৭ সাল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ৯০টিরও বেশি দেশের ২০০ জনেরও বেশি নারীকে আইডব্লিউওসি পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
তিনি বলেন, বিদেশে মার্কিন কূটনৈতিক মিশনগুলো তাদের নিজ নিজ অবস্থানের (হোস্ট) দেশ থেকে একজন সাহসী নারীকে মনোনীত করে এবং চূড়ান্ত প্রার্থীদের নির্বাচিত করে বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুমোদন করেন।
মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের পরে পুরস্কারপ্রাপ্তরা ওয়াশিংটন ডিসিতে আন্তর্জাতিক ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে অতিরিক্ত প্রোগ্রামিংয়ে অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে তারা বিশ্বব্যাপী নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য তাদের কাজকে আরও এগিয়ে নেওয়ার কৌশল নিয়ে আমেরিকান নারীদের সাথে দেখা করবেন।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক “ম্যাডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড” পেয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারী শিক্ষার্থীরা। আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকা (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ বা আইডব্লিউওসি) পুরস্কারের পাশাপাশি এই পুরস্কার দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) পররাষ্ট্র দপ্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের আয়োজনে বিজয়ীদের এই পুরস্কার দেওয়া হবে।
মর্যাদাপূর্ণ এই অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নারী শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যেই অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :