AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কারণে দাম বাড়বে আইফোনের?


Ekushey Sangbad
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০১:৫৯ পিএম, ১১ এপ্রিল, ২০২৫
চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কারণে দাম বাড়বে আইফোনের?

চীনের ওপর নতুন করে আরোপিত আমদানি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও স্মার্টওয়াচসহ জনপ্রিয় প্রযুক্তিপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্ক নীতির প্রভাব সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারে, ফলে আইফোনসহ বহু গ্যাজেটের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির ধারাবাহিকতায় চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কারণ, এসব প্রযুক্তিপণ্যের বড় অংশ চীনে উৎপাদিত হয়।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চীনের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ১৪৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও স্মার্টওয়াচের মতো জনপ্রিয় প্রযুক্তি পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে আইফোন নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি অ্যাপল এই বাড়তি খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়, তাহলে একটি আইফোনের দাম শত শত ডলার বেড়ে যেতে পারে।

এছাড়া অনেক স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং স্মার্টওয়াচ চীনেই তৈরি হয়। অ্যাপলের আইফোনের ৮০ শতাংশই তৈরি হয় চীনে, বাকিটা ভারতে। ফলে এই শুল্ক নীতির সরাসরি প্রভাব অ্যাপলের ওপর পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আর যদি ট্রাম্পের এই শুল্ক ডলারের মূল্যের ওপর প্রভাব ফেলে, তাহলে বিশ্বজুড়ে আইফোন এবং অন্যান্য ডিভাইস আমদানি করা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের দোকানগুলোতেও দাম বেশি হতে পারে।

অ্যাপলের নীতি হচ্ছে, তারা বিশ্বব্যাপী একই রকম দাম রাখার চেষ্টা করে, যাতে এক দেশে কম দামে কিনে অন্য দেশে সেটি বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ না থাকে।

সিসিএস ইনসাইট-এর বেন উড বিবিসিকে বলেন, যদি শুল্ক বহাল থাকে তাহলে পরবর্তী সংস্করণ চালু হলে অ্যাপল বিশ্বব্যাপী আইফোনের দাম বাড়াতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কোম্পানিটি আলাদা মূল্য নির্ধারণ করতে চাইবে এমনটা অসম্ভব। কারণ প্রযুক্তি জায়ান্টটি চাইবে যে— লোকেরা যুক্তরাজ্যে সস্তায় ডিভাইসটি কিনে যেন যুক্তরাষ্ট্রে লাভের জন্য বিক্রি না করে।

পাঁচটি বিমানে করে আইফোন ভারত থেকে নিয়ে গেল অ্যাপল

যদিও অন্যরা বলছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে— যেসব সংস্থা সাধারণত তাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, তারা যদি যুক্তরাজ্যের মতো উচ্চ শুল্ক না থাকা দেশগুলোতে পাঠায় তবে দাম কম হতে পারে। এবং বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের ওপর শুল্কের খরচ চাপিয়ে দেওয়া হলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ বেন উড বলছেন, দাম বাড়লে মোবাইল অপারেটররা দীর্ঘমেয়াদি কিস্তির মাধ্যমে ফোন বিক্রি শুরু করতে পারে। এখন যেখানে ফোন চুক্তির মেয়াদ ২ বছর, তা বাড়িয়ে ৪ বা ৫ বছর করা হতে পারে। তিনি বলেন, “এটা অনেকটা একটা স্মার্টফোন মর্টগেজের মতো হয়ে যাবে।”

আইফোন কোথায় তৈরি হয়?

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র আইফোনের একটি প্রধান বাজার এবং গত বছর অ্যাপল তাদের মোট বিক্রিত স্মার্টফোনের অর্ধেকেরও বেশি যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেছিল। তাদের হিসেবে অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য অ্যাপলের ৮০ শতাংশ আইফোন তৈরি হয় চীনে, আর বাকি ২০ শতাংশ ভারতে তৈরি হয়।

স্যামসাংয়ের মতো সহযোগী স্মার্টফোন জায়ান্টদের সাথে অ্যাপলও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এড়াতে তার সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে ভারত এবং ভিয়েতনাম অতিরিক্ত উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর

শুল্ক কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে অ্যাপল সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারতে উৎপাদিত ডিভাইসের উৎপাদন দ্রুত এবং বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, অ্যাপল ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ টনেরও বেশি আইফোন কার্গো ফ্লাইট ভাড়া করে পাঠিয়েছে।

বিবিসি অ্যাপলের কার্যক্রম এবং দামের ওপর শুল্কের প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

অ্যাপল কতটা শুল্কের মুখোমুখি?

ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টারা বলেছেন, তাদের আরোপিত শুল্কের লক্ষ্য হলো আরও বেশি মার্কিন উৎপাদনকে উৎসাহিত করা। তবে, প্রযুক্তি শিল্প পণ্যের উপাদান এবং অ্যাসেম্বলের জন্য সরবরাহকারীদের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে হয়।

তবে দ্রুত গতি এবং কম খরচে উৎপাদনের সাথে মেলে এমন দক্ষ কর্মী খুঁজে বের করা ও সরবরাহ শৃঙ্খল স্থানান্তর করা সহজ কাজ নয়।

অবশ্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করে। তবে বিশ্লেষক ড্যান আইভস বলেন, অ্যাপলের সাপ্লাই চেইনের মাত্র ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে হলেও তিন বছর ও প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে যাবে।

আইফোনের দাম কি বাড়বে?

অ্যাপল এখনও প্রকাশ করেনি যে তারা শুল্কের খরচ মার্কিন গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেবে কিনা এবং দাম বাড়াবে কিনা। তবে কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন, অ্যাপল অন্যদের তুলনায় বেশি ভালো অবস্থানে রয়েছে, কারণ তারা তাদের পণ্য তৈরিতে ব্যয়ের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেছে।

ফরেস্টারের প্রধান বিশ্লেষক দীপাঞ্জন চ্যাটার্জী বলেছেন, “ডিভাইসগুলোতে লাভজনক মার্জিনসহ একটি কোম্পানি হিসেবে ট্যারিফ-প্ররোচিত খরচ বৃদ্ধির কিছু অংশ উল্লেখযোগ্য আর্থিক প্রভাব ছাড়াই বহন করতে পারে অ্যাপল, অন্তত স্বল্পমেয়াদে।”

তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, কোম্পানির শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং এবং জনপ্রিয়তা খুব বেশি কোনও প্রতিক্রিয়া ছাড়াই গ্রাহকদের কাঁধে কিছু খরচ তুলে দিতে পারে।

কিছু আনুমানিক হিসেব অনুসারে, যদি খরচ গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তবে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম তিনগুণ হতে পারে।

চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক ১২৫ শতাংশতে বৃদ্ধির পর বিনিয়োগ ব্যাংকিং সংস্থা ইউবিএসের অনুমান অনুসারে, চীনে তৈরি ২৫৬ জিবি স্টোরেজসহ আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের দাম ১১৯৯ ডলার থেকে বেড়ে ১৯৯৯ ডলারে পৌঁছে যেত।

তারা অনুমান করছে, আইফোন ১৬ প্রো ১২৮ জিবি স্টোরেজ — যা ভারতে তৈরি — ৫ শতাংশ কম বৃদ্ধি পেয়ে ৯৯৯ ডলার থেকে ১০৪৬ ডলারে পৌঁছে যাবে। যদিও ড্যান আইভসের মতো কিছু বিশ্লেষক ইঙ্গিত দিয়েছেন, “মেড ইন ইউএসএ” আইফোনের দাম ৩৫০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ভোক্তারা কী করবেন?

এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই কিছু মার্কিন ক্রেতা দাম বাড়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই অ্যাপল স্টোর থেকে ফোন কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, দাম যতই বাড়ুক, তারা অ্যাপল ছেড়ে যাবেন না। তবে কেউ কেউ পুরোনো বা সেকেন্ড-হ্যান্ড ডিভাইসের দিকেও ঝুঁকছেন।

বিবিসি বলছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যে আনুমানিক ৫৫ লাখ পুরোনো স্মার্টফোন বিক্রি হতে পারে, যা দেশটির মোট বাজারের প্রায় ৩০ শতাংশ। বেন উডের মতে, “সর্বোত্তম বিকল্প হলো পুরোনো ফোনটিই আরও কিছুদিন ব্যবহার করা।”

এছাড়া গুগল ও স্যামসাংয়ের ফোনেও অনেকে ঝুঁকতে পারেন— কারণ ফিচার প্রায় একই, সেই হিসেবে দাম তুলনামূলক কম।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে অ্যাপলসহ প্রযুক্তি পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় ও সরবরাহ ব্যবস্থার বড় পরিবর্তনের মুখে। দাম বাড়ার আশঙ্কায় অনেকেই আগেভাগেই ফোন বা ল্যাপটপ কিনে নিচ্ছেন, আবার অনেকে পুরোনো ডিভাইস চালিয়েই সময় পার করার পরিকল্পনা করছেন।

শেষ পর্যন্ত, অ্যাপল ঠিক কী পদক্ষেপ নেয়— তা দেখার জন্য আমাদের পরবর্তী আইফোন রিলিজের (সম্ভবত সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। মূলত ট্রাম্পের শুল্ক নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, পুরো বিশ্বের প্রযুক্তি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।

এখন দেখার বিষয়, অ্যাপল কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করে।

 

একুশে সংবাদ/ঢ.প/এনএস

Shwapno
Link copied!