বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেছেন- রাজাকারদের তালিকা অনেক আগেই করা দরকার ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান সময়ে রাজাকারের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা এবং তাদের তালিকা প্রস্তুত করা জরুরি। তিনি বলেন, আমি তাকেই রাজাকার বলতে রাজী যিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেন না, বাংলাদেশের সংবিধান মানেন না, যারা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অস্বীকার করেন এবং যারা জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতকে অবমাননা করেন।
তিনি বলেন, প্রথম প্রজন্ম শেষে এখন দ্বিতীয় প্রজন্মের রাজাকার তৈরি হয়েছে। প্রথম প্রজন্মের রাজাকার হলো যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো। এখন দ্বিতীয় প্রজন্মের রাজাকারদের আমাদের চিহ্নিত করা উচিত। এ নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।
রাজাকারদের বিচার বিষয়ে হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এদের বিচার আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংবিধানের আওতায় আনা উচিত। বিচার শব্দটি একটি বৃহৎ শব্দ। কেউ যদি অন্যায় করে এবং সাংবিধানিকভাবে একা যদি অন্যায় প্রমাণিত হয় তবে একে বিচারের আওতায় অবশ্যই আনতে হবে।
সোমবার (২৭ মে) দৈনিক জাগরণের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠনে যে সব বাঙালি পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল, তাদের তালিকা সংগ্রহ করে তা রক্ষণাবেক্ষণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। চিঠিতে থানা ও জেলা পর্যায়ে রাজাকার, আল বদর, আল-শামস সদস্যদের তালিকা সংরক্ষণে কথা বলা হয়েছে।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগের বৈঠকে সংসদীয় কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কয়েকটি রাজনৈতিক দল পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী। তখন যুদ্ধরত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল। আনসার বাহিনীকে এই বাহিনীতে একীভূত করা হয়েছিল।
প্রথমে এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত শান্তি কমিটির অধীনে থাকলেও পরে একে আধা সামরিক বাহিনীর স্বীকৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। একই রকম আধা সামরিক বাহিনী ছিল আল বদর বাহিনী ও আল শামস বাহিনী। তবে স্বাধীনতাবিরোধী এই বাহিনীগুলোকে সাধারণ অর্থে রাজাকার বাহিনী হিসেবেই পরিচিত বাংলাদেশে। প্রায় এক দশক আগে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর রাজাকারের তালিকা তৈরির দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :