পদ্মা সেতু! বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এ সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, যোগাযোগ, শিল্পায়নসহ উন্নয়নের সকল শাখায় সংস্কারের ছোঁয়া লেগেছে। পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবন যাত্রায়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক সচিব ও গবেষক ড. প্রশান্ত কুমার রায়। তার মুখোমুখি হয়েছিলেন একুশে সংবাদের প্রতিবেদক রেজোয়ানুল হক রিজু।
একুশে সংবাদঃ কেমন আছেন?
ড. রায়: ভালো আছি।
একুশে সংবাদঃ ড. রায় আপনি পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. রায়: দেখুন, কোন ভূমিকা না করেই এক কথায় বলা যায়- এটি একটি অভাবনীয় সাফল্য যা বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় পৌছে দিয়েছে। এই সেতুর সাথে জড়িয়ে আছে ১৮ কোটি বাঙালির বাঁধ ভাঙ্গা আবেগ। জড়িয়ে আছে আবহমান কালের সহস্র মানুষের অবর্ণনীয় ভোগান্তি বিজড়িত কষ্টমুক্তির আনন্দ। আর এই মুক্তির বার্তা ও নতুন জীবনযাত্রার স্বপ্ন যিনি পূরণ করেছেন তিনি বাঙালির উন্নয়নের স্বপ্ন-সারথি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দৃঢ়চেতা ও সংকল্পে অটল ব্যক্তিত্বই আমাদের এ অনন্য অর্জনকে সম্ভব করে তুলেছে। একটি কথা না বললেই নয়, পিতা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন আমাদের জাতিসত্তার মর্যাদা ও স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশ, আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা দিল অনন্য উন্নয়ন ও উন্নত জীবন। আসলেই আমরা পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের কাছে চির ঋণী হয়ে থাকব।
একুশে সংবাদঃ আন্তজার্তিক দৃষ্টিকোন থেকে এ সেতুকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. রায়: এটি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে গিনেস বুকে নাম লেখার যোগ্য এক স্থাপত্য শিল্প। এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের করিডোর বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ টি জেলার ৪ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির এক অনবদ্য সুতিকাগার। আপনি যদি এই সেতুর (রসঢ়ধপঃ) বা ফলাফল নিয়ে কথা বলতে চান তা এক থেকে দুই ঘন্টায় বলে শেষ করা সম্ভব নয়। এটার উপর ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পদ্মাসেতু একটি জাতির আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রপঞ্চের লাগসই আধুনিক কৌশলের নাম। এই কৌশলকে পুঁজি করে অচিরেই বাংলাদেশ বিশ্বের ধনী দেশের কাতারে শামিল হবে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে সেদিন যে গবেষণা পত্র তৈরী হবে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক একাধিক পুরষ্কার এনে দেবে; এমনকি কোন একদিন নোবেল পুরষ্কারও পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।
একুশে সংবাদ: অনেকেই বলে প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে এই সেতু যোগাযোগ ও ব্যবসায়ীক সুবিধা এনে দিবে। এবিষয়ে আপনার অভিমত কি?
ড. রায়: দেখুন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্বে ভারত ও বাংলাদেশ একই রাষ্ট্র ছিল। ভাগ্যের বিড়ম্বনা হিন্দু-মুসলিম দ্বিজাতিত্ব না হলে পশ্চিম বাংলার বাঙালি ও আমরা নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে এক জাতি হিসেবে সুখে-দুখে একই সাথে থাকতাম। হয়ত আজ আমাদের একটাই স্বাধীন বাংলা হতে পারত। তাই আবেগের জায়গাটা আমাদের এক ও অভিন্ন। আপনি জেনে থাকবেন ১৯৭২ সালে কলকাতার প্যারেড গ্রাউন্ডে স্মরণ কালের বৃহৎ জনসভা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে ১০ লক্ষের উপর বাঙালি সমবেত হয়েছিল, জয় বাংলা জয় বাংলা শ্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে অকুন্ঠ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত করেছিল বাঙালির অবিসম্বাবিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। এবার দেখুন ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদ্মাসেতু উদ্বোধনকালে কলকাতায় ২৫ টি পয়েন্টে সমবেত হয়ে বড় পর্দায় এ উদ্বোধন ও গৌরবের অংশিদারিত্বকে ভাগ করে নিয়েছে লাখ বাঙালি। আসলে জাতিগত রক্তের বাঁধন, আবেগ, ভালোবাসা কখনোই পৃথক করা যায় না সেটা তার নিজস্ব গতিতেই ফুটে ওঠে। পদ্মা সেতু শুধু সড়ক যোগাযোগ বা ব্যবসায়ীক নয় বন্ধুপ্রতীম দুদেশের জনগণের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ককেও নিকটতর করে দিবে।
একুশে সংবাদঃ অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের কি সুবিধা হবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. রায়: দেখুন, পৃথক দেশ হলেও ভূখন্ডত একটাই। খুব সহজ হিসেব। আগে একটি ট্রাক ঢাকা থেকে বেনাপোল যেতে এবং বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসতে সময় লাগত দশ থেকে বারো কখনোবা আঠার ঘন্টা। আর আবহাওয়া বৈরী হলে পদ্মার রুদ্ররূপ থেকে প্রান বাঁচাতে ফেরী বন্ধ থাকত দীর্ঘক্ষণ। আজ ঢাকা থেকে বেনাপোল যেতে ছয় ঘন্টা যথেষ্ট, নড়াইল হয়ে যাবার রাস্তা উন্মুক্ত হলে আরও ১ ঘন্টা সময় কম লাগবে। এমনকি এখন চট্টগ্রাম থেকেও পন্য সড়ক পথে বা ট্রেন পথে ভারতে যাওয়া সহজ হয়ে গেল। যাত্রীবাহী বাসের ক্ষেত্রেও একই সুবিধা হবে এবং যাত্রীরা ভোগান্তিহীনভাবে উভয় দেশে যাতায়াত করতে পারবে। ভারতের শুধু পশ্চিম বঙ্গ নয় আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরামসহ সর্বত্রই এ সুবিধা পাওয়া যাবে।
একুশে সংবাদ: অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে কি কি সুবিধা সৃষ্টি হবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. রায়: এবিষয়ে ইতোমধ্যে একাধিক সম্ভব্যতা যাচাই, পরিবেশের প্রভাব, খরচ ও লাভ ইত্যাদির ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে। আসলে পদ্মা সেতু একটি বহুমুখী উন্নয়ন প্রপঞ্চের নাম। তার ব্যপকতাও রয়েছে অনেক যা এ সেতু চালুর মধ্যদিয়ে ৪ কোটি মানুষের জীবনে দারুন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যেমন ধরুণ, আমাদের দেশের ৮০ভগ মানুষ গ্রামে বাস করে ও ক্ষেতে খামারে খেটে ও বিনিয়োগ করে উৎপাদন করে এবং এ উৎপাদিত পন্য যেমন তারা নিজেরা গ্রহণ করে তেমনি ২০ ভাগ শহুরে বাবুদের খাদ্যাভাব পূরণ করে। পদ্মা সেতু হবার আগে বরিশাল বা খুলনা থেকে উৎপাদিত মাছ, হাস-মুরগী, গবাদি পশু ঢাকায় আনা দু:স্বপ্নের ব্যাপার ছিল। এখন সেটি মাত্র ৪-৫ ঘন্টায় সম্ভব। তাহলে এই বিরাট গ্রামীণ জনপদের উৎপাদিত মাছ, হাস-মুরগী, গবাদি পশু ঢাকায় আনার বিষয়টি খুব সহজ হবে। গ্রামের পশুটাও সহজে আনা যাবে, প্রসেস করে প্রোজেন ভ্যানে করেও দ্রুত আনা যাবে এবং আনার খরচ কমে যাবে উৎপাদক হিসেবে তারা উপযুক্ত মূল্যও পাবে। এটা দেখে নতুন নতুন খামার গড়ে উঠবে। অর্থনৈতিক লেন-দেন বাড়বে, আয় বাড়বে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। যখন আয় বাড়বে তখন ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে, বাজারে প্রবেশের সুযোগ হবে- জীবনযাত্রার দৃশ্যমান মান্নোয়ন হবে অতি দ্রুত। দ্বিতীয় একটা প্রমান দেই- পদ্মার ওপার কোন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী আছে কি? নেই। কারণ এই দুর্বিপাকযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু আজ এটা একেবারেই নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিল। ইতোমধ্যে অনেক শিল্পপতি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ সকল সড়ক যোগাযোগ পয়েন্টে অনেক জায়গা কিনেছেন। জমির দাম এই ২১টি জেলাতে গত ২ বছরে ৩ গুন বেড়েছে। এক কথায় পদ্মা সেতু ২১ টি জেলার ৪ কোটি মানুষের মার্কেট সুবিধা তৈরীর এক অনবদ্য আশীর্বাদ বলে প্রতীয়মান হয়। ৩য় একটি বিষয়- রজধানীর সাথে মানুষের যোগাযোগকে হাতের মুঠোয় এনে দিবে। যেমন- মহামান্য হাইকের্টে খুলনার এক নাগরিকের মামলা আছে বা সচিবালয় বা অন্যকোন সরকারী দপ্তরে কাজ আছে, আগে তাকে ২ দিন সময় হাতে নিয়ে লঞ্চ বা ফেরী পারের বিড়ম্বনাকে মাথায় নিয়ে ঢাকা রওনা হতে হত। কিন্তু এখন তিনি সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢকায় কাজ সেরে ৫টায় গাড়ি ধরলেই রাত ৮-১০টার মধ্যে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারবে। আমি এটাও দেখলাম অনেকেই ঢাকা অভিমুখে বসবাসের বাসনা ছেড়ে সেতুর ওপার জায়গা নিয়েছে- নির্মল বায়ু, গ্রামীণ জীবন ও কোলাহল এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ যা সকলকে নতুন জীবনের হতছানি দিচ্ছে এবং পক্ষান্তরে ঢাকাকে জনপ্রেসার মুক্ত ও স্থায়ীত্ব দিতে এ প্রক্রিয়া একটা বড় ধরনের সহায়তা দিবে। এরকম সহস্র ডাইমেনশন তৈরী হবে পশ্চাদপদ এসকল মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের যা একদিন জাতির পিতার সাম্যভিত্তিক উন্নয়নকে বাস্তবে পরিণত করবে বলে আমি মনে করি।
একুশে সংবাদ: আপনি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কথা বলছিলেন। সেখানে এ প্রকল্পের আর্থিক ব্যয় ও লাভ প্রসংঙ্গে কি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
ড. রায়: দেখুন, পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং এর পিছনে বিনিয়োগ ও রিটার্ন ইত্যাদি বিষয়ে ২০০৪ সাল থেকে দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন এজেন্সী দ্বারা জরিপ বা স্টাডি করা হয় এবং সব সময়ই দেখা গেছে- খরচের তুলনায় লাভের পরিমান অনেক বেশি। ২০১০ সালে খরচ ও লাভ এর উপর একটি সমীক্ষা যা যাচাই করে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর মোট খরচ ও তার রিটার্নের অনুপাত ২.০১। সেতু কেন্দ্রিক ৩১ বছরের রাজস্ব বা টোল আদায় এবং ভ্রমন সময় বেনিফিট প্রায় ১,২৯৫,৮৪০ মিলিয়ন টাকা বা ১৮,৫১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা খরচের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশী অর্থাৎ বার্ষিক হিসেবে বেনিফিট ১.২৬%। অন্যদিকে সেতুর বাইরে অর্থনৈতিক যে কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে সেখান থেকে ৩১ বছরে রিটার্ন আসবে ৪৫৩,৬৭০ মিলিয়ন টাকা বা ৬৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা খর বা বিনিয়োগের তুলনায় ১০.৬ শতাংশ অর্থাৎ বার্ষিক হিসেবে প্রবৃদ্ধি বা বেনিফিট ০.৩৩%। গ্রামীণ ও অবহেলিত মানুষের জীবনমানের দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে যা দু’টি ডাইমেনশনে হিসেব করা হয়েছে- একটি জাতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক চাহিদা যেমন- ফসল খাতে ১০%,মৎস্য খাতে ১০%, পানি,বিদ্যুৎ, গ্যাস বা জ্বালানির ন্যায় জনউপযোগমূলক সেবা খাতে ৫% ও পরিবহন সেবা খাতে ২০% বৃদ্ধি ঘটবে। অনুরূপভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এসকল সুযোগ দ্বিগুন বৃদ্ধি পাবে যেমন- ফসল খাতে ২০%, মৎস্য খাতে ২০%, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা জ্বালানির ন্যায় জনউপযোগমূলক সেবা খাতে ১০% ও পরিবহন সেবা খাতে ৫০% বৃদ্ধি ঘটবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় গ্রামীণ জীবনে পরিবার প্রতি বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পাবে ১.৪০৭% এবং আঞ্চলিক বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে ১.৬৬%। এ হিসেবগুলো মূলত: যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু কেন্দ্রিক প্রভাবিত এলাকার উপর নির্দিষ্ট সময়কালের অর্থনৈতিক পরিবর্তনকে বেজ ধরেই প্রণীত- একারণে বাস্তবিক হারের কিছুটা তারতম্য হতেও পারে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা এই রিটার্ন বাস্তবে অনেক বেশী হবে যা সময় আমাদেরকে জানান দিবে।
একুশে সংবাদঃ শেষ প্রশ্ন, পদ্মা সেতু নি:সন্দেহে অগ্রগতি ও উন্নয়নের চাকাকে গতিশীল করবে। আপনার দৃষ্টিতে এই সেতুর কারনে নেতিবাচক কি প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে বলে আপনি আশঙ্কা করছেন?
ড. রায়: প্রতিটা কাজেরই একটি ইতিবাচক ও একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থকে। প্রশ্ন হচ্ছে আমি যে কাজ করব তার অবশ্যই ভাল-মন্দ যাচাই করেই করব কারণ আমাকে কোন কাজকে অগ্রগতির নিরিখে ভাবতে হবে তার নেতিবাচক প্রভাবের ফলাফলকে হিসেব করেই। আমি আগেই উল্লেখ করেছি, পদ্মা সেতু নির্মানের পূর্বে বহুবার এর সম্ভাব্যতা, ক্ষয়-ক্ষতি, ইতিবাচক ও নেতিবচক প্রভাব বিস্তারিত জেনে এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রেখেই এ মহাযজ্ঞ বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিবাচক প্রভাব অনেক বেশি বলেই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন যে, পদ্মা সেতু আমাদের স্বাধীনতার যে মহান অর্জন তারপরই এটার স্থান- এসত্য আমি নিজেও অনুভব ও বিশ্বাস করি কারণ আমি নিজেও এই বৃহৎ অর্জনের ইতিবাচক প্রভাবের একজন অংশীদার, আমার বাড়ি খুলনায়। যহোক নেতিবাচক দিক মাত্র গুটি কয়েক- দু-পাড়ের জনগণের ক্ষতি, নদীর নাব্যতা, লঞ্চ, ফেরী ও স্পীডবোট চলাচলসহ ঘাট শ্রমিকদের কর্মহীন হয়ে পড়া ব্যতীত আর তেমন কোন নেতিবচক দিক দেখা যায় না। আশার কথা হচ্ছে দুপাড়ের জনগণকে ক্ষতিপূরণসহ পুণর্বাসিত করার কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে, নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য নদী শাসন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বিশেষ ড্রেজিং ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা দূর করা যাবে সর্বোপরি নদী শাসনে এ সেতুর মোট ব্যয়ের প্রায় ১৫% অর্থ বরাদ্দ রয়েছে এবং তদানুযায়ী ব্যবস্থাও গৃহিত হয়েছে, ইতোমধ্যে স্থানীয় পশু-পাখি ও প্রানীদের জন্য অভায়ারন্য গড়ে তোলা হয়েছে, এবং লঞ্চ, ফেরী ও স্পীডবোট চলাচলসহ ঘাট শ্রমিকদের কর্মহীন হয়ে পড়ার বিষয়টি তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না করণ ফেরী, স্পীড বোট ও লঞ্চ অন্য রুটে চলাচল করবে, শ্রমিকদের নতুন নতুন কর্মসুযোগ ইতোমধ্যেই সেতুর দু-পাড়ে তৈরী হয়েছে এবং অনেকেই তাদের এলাকাতে গিয়ে নতুন কর্মসুযোগ তৈরী করতে পারবে যা সেতু হবার করণেই সৃষ্টি হয়েছে। একটি কথা মনে রাখতে হবে, বৃহত্তর স্বার্থে ছোট ছোট ক্ষয়-ক্ষতি মেনে নিতে হয় এবং মানুষ সেভাবেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়।
একুশে সংবাদ.কম/র.রে.জা.হা
আপনার মতামত লিখুন :