পৃথিবীর সব জাতীরই নতুন বর্ষ বরণের দিন আছে।ইংরেজী নববর্ষ ,চাইনিজ নববর্ষ ,আরবী নববর্ষ এরকম আরো অনেক জাতী,গোষ্ঠী,উপগোষ্ঠী নানান আয়োজনে তাদের বর্ষ বরণ করে থাকে।তেমনি আমাদের নববর্ষর শুরু হয় বৈশাখের প্রথম দিনে,প্রথম সূর্যালোকে।
চৈত্রের শেষ দিনে অস্তমিত সূর্যের সাথে সাথে আমরা চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবের মাধ্যমে পুরাতন বর্ষকে যেমন বিদায় জানাই,তেমনি বৈশাখের প্রথম উদিত সূর্যের সাথে আমাদের শুরু হয় নতুন বছরের আগমনি উৎসব। পহেলা বৈশাখ মূলত: মুঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকে শুরু হয়।তিনি মূলত খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা সন প্রবর্তন করেন।সে সময় এটি ছিলো খাজনা আদায়ের উৎসব।
ইংরেজী ১৫৮৫ খ্রীষ্টাব্দ এবং হিজরী ৯৬৩ থেকে বাংলা সন চালু হয়।আমরা বাঙ্গালীরা নানান বাঁধা নিষেধ পেরিয়ে পরিপূর্ণভাবে নববর্ষ পালন করা শুরু করি ১৯৬৮ সাল থেকে।১৯৬৮ সাল থেকে রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষ বরণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় আমাদের পহেলা বৈশাখের উৎসব।
এবং তা জাতীয় উৎসবে রূপ নেয়। গ্রামবাংলার পহেলা বৈশাখ আর নগরকেন্দ্রিক পহেলা বৈশাখে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও মিলের অংশটুকুও কম নয়।ঘরে ঘরে পিঠা পুলি বানানো,পান্তাভাত এবং নানান ভর্তার আয়োজন,বৈশাখি মেলায় নানান রকম হস্তশিল্পের সমাহার,মেয়েদের লাল সাদা শাড়ী আর ছেলেদের পায়জামা পান্জাবী পরে ঘুরে বেড়ানো,এসবের পাশাপাশি নতুন করে যোগ হয়েছে ইলিশের ধারণা।আর,মঙ্গল শোভাযাত্রার।
১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম চারুকলা ইন্সটিটিউট আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রাই পরবর্তিতে ১৯৯৫ সাল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পালিত হয়ে আসছে।মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হয় বাঙ্গালী সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানান প্রতিকী শিল্পকর্ম এবং রং বেরঙের মুখোশের মাধ্যমে। হালখাতা নববর্ষের আরেক উৎসব।এইদিনে ব্যাবসায়িরা পুরাতন বছরের হিসাব নিকাষ শেষ করে নতুন বছরের জন্য নতুন খাতা খুলেন।
সে উপলক্ষে তাঁরা তাঁদের গ্রাহক,পাড়া প্রতিবেশি,আত্মীয় স্বজন,বন্ধু বান্ধবদের মিষ্টি বিতরণ করে থাকেন। বাংলা নববর্ষ এমন একটি উৎসব,যেখানে জাতী,ধর্ম ,বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এককাতারে দাঁড়িয়ে পালন করে থাকে।এই দিনে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকেনা।এরকম একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব বলেই পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙ্গালী জাতীস্বত্বার পরিচায়ক।
এই এক মোহনায় এসে আমরা সকলে বাঙ্গালী,বাংলাদেশী। সারা বিশ্বে ছডিয়ে আছে অসংখ্য বাঙ্গালী,বাংলাদেশী।তারাও ঘটা করে নববর্ষ পালন করে থাকেন।বিশেষত বিলেতে আমরা নববর্ষ পালন করে থাকি মে মাসে।কারণ,তখন ঠান্ডাটা কিছু কমে আসে।আমরা আমাদের প্রাণ প্রিয় বাংলাদেশের মতোন করেই মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু করি আমাদের বর্ষ বরণ।
ইউকের নানান জায়গা থেকে অসংখ্য ভাইবোনেরা চলে আসেন আমাদের ইস্ট লন্ডনে আয়োজিত বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান দেখতে।রঙ বেরঙের শাড়ী পরে এবং পায়জামা পান্জাবী পরে প্রবাসী বাঙ্গালীরা সেই দিন মেলে দেন তাদের মনের পাখনা।এক খন্ড বাংলাদেশকে তুলে আনেন বুকের গভীর থেকে ইষ্ট লন্ডনে।
প্রতিবছরের মতোন নববর্ষ আমাদের দোরগোড়ায় চলে এসেছে।পুরাতনকে দিতে হবে বিদায়,নতুনকে করতে হবে স্বাগত।কিন্তু,গত বছর বাংলা ১৪২৭ ইংরেজী ২০২০ থেকে আমরা করোনার অতিমারিতে আক্রান্ত।পুরো বিশ্ব এই অতিমারিতে বিপর্যস্ত।করোনার কারণে গত ১৪২৭এর নববর্ষ আমরা পালন করতে পারিনি।কেউ কেউ অনলাইনে পালন করেছিলেন।আমরা ভেবেছিলাম সব অমঙ্গল উড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়ে এবার নববর্ষ আমাদের জন্য শান্তির বারতা নিয়ে আসবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হলোনা।করোনার অতিমারীর তান্ডব লীলা এখনো চলছে।তবে,জীবন কখনো হার মানেনা।আমরা বৃহদাকারে নতুন বছরকে বরণ করতে না পারলেও ক্ষুদ্রাকারে নিজেদের ঘরের ভিতরে,পরিবারের সাথে নতুন বছরকে বরণ করে নেবো।আমরা আশা করবো এবং প্রার্থনা করবো কবিগুরুর গানের সাথে—-“মুছে যাক্ গ্লানি,ঘুচে যাক্ জরা।অগ্নি স্নানে শূচি হোক ধরা। সবাইকে নববর্ষের শুভকামনা জানাই।সকলে ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।শুভ নববর্ষ
Hafsa sent Today at 16:56
আপনার মতামত লিখুন :