AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পার্বত্য শান্তি চুক্তি: ইউপিডিএফ‍‍`র সভাপতি অংগ্য মার্মার সাক্ষাৎকার


Ekushey Sangbad
নিউটন চাকমা, রাঙামাটি
০৬:৪১ পিএম, ২ ডিসেম্বর, ২০২২
পার্বত্য শান্তি চুক্তি: ইউপিডিএফ‍‍`র সভাপতি অংগ্য মার্মার সাক্ষাৎকার

আজ শুক্রবার ২ ডিসেম্বর। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বৎসর পুর্তি। এই দিনে বিগত ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (তৎকালীন গেরিলা শান্তি বাহিনী)-র সাথে তৎকালীন ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি নামে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়।

 

চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস ও খুশীর জোয়ার বয়েছিল। অন্তত দীর্ঘ ২ যুগেরও বেশী সময় ধরে সশস্ত্র রক্তক্ষয়ীর সংঘর্ষ, অপহরণ, গুম, চাঁদাবাজির ঘটনা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাৎপদ এলাকায় বসবাসকারীরা স্বস্তিতে বসবাস করবেন। এই আশা ভরসা নিয়েই তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতি পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে সম্মতিতে দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়।

 

এতে দেশের ও বহ্নিবিশ্বের এই পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকে ঐতিহাসিক চুক্তি উল্লেখ করে বাংলাদেশের অনেক বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আশার বাণী ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি জাতিসংঘও এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘ ২ যুগের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলা সেই সংঘর্ষ বন্ধের জন্য সশস্ত্র পথ পরিহার করে তৎকালীন গেরিলা শান্তি বাহিনী জনসংহতি সমিতির সদস্যরা অনেক বুকভরা আশা ও স্বপ্ন নিয়েই সশস্ত্র সংগ্রামের পথকে স্থায়ীভাবে পরিহার করে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার প্রত্যয় এবং জীবনযাপনের লক্ষ্যে নিজ বসত ভিটে-মাটিতে ফিরে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)-র সশস্ত্র গেরিলা সদস্যরা।


পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জুম্ম জনগোষ্ঠীদের আত্ননিয়ন্ত্রন অধিকার ও স্বাধিকার আন্দোলনকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) দীর্ঘ ২ যুগের রক্তক্ষয়ীর সংঘাতের ফলে তৎকালীন ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)-র মধ্যে অনাড়ম্বর পরিবেশে রাষ্ট্রীয় ভাবে তৎকালীন সময়ে (রোজ মঙ্গলবার) ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রীয় মযার্দায় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি নামে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়। আজ পার্বত্য শান্তি চুক্তির সুদীর্ঘ ২৫ বছর পুর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থা দৈনিক একুশে সংবাদ.কম রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি নিউটন চাকমার সঙ্গে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলার সংগঠক গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অংগ্য মার্মার সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতকার নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

 

একুশে সংবাদ.কম: পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বৎসর পূর্তি উপলক্ষে আপনাকে  একুশে সংবাদ.কম এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

 

অংগ্য মার্মা: আপনাকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আলোচনা শুরু করতে চায়।

 

একুশে সংবাদ.কম: আজ ২রা ডিসেম্বর ২০২২ ইং। পার্বত্য শান্তি চুক্তি পাহাড়ি জুম্ম জনগোষ্ঠীদের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য দিন। এই উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিশ্বের অবস্থানরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা বর্ষপূর্তি উদযাপন করছেন। এই লক্ষ্যে ইউপিডিএফের কেমন অনুভূতি হচ্ছে?

 

অংগ্য মার্মা: চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে আসেনি। পাহাড়ে এখনো বিপুল সংখ্যক সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি, প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখল, গত ২৫ বছরে পাহাড়িদের উপর কমপক্ষে ১৯টি বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক সেটেলার হামলা, সব সময় ভয়ভীতিকর পরিবেশে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।  সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে না আসার তার বড় প্রমাণ।

 

সরকার গত আগষ্ট মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। এখানে শান্তি থাকলে, সবকিছু ঠিক মত চললে অনুমতি না দেয়ার তো কোন মানে হয় না। চুক্তি ২৫ বছর পরও পাহাড়ে শান্তি আসেনি- এই সত্যকে সরকার ধামাচাপা দিয়ে বাইরের বর্হিবিশ্বের দরবারে বিদেশীদের কাছে লুকোতে চাইছে।  পার্বত্য চুক্তিকে নিয়ে চুক্তি সম্পদনকারী উভয়পক্ষ সরকার ও জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পাহাড়ি জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।

 

যে চুক্তি ২৫ বছর পরও পাহাড়ে শান্তি নিয়ে আসতে পরেনি সে চুক্তির বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান পালনের নামে আনন্দ উল্লাস পাহড়ি জনগণের সাথে তামাশার সামিল।

 

একুশে সংবাদ.কম: শান্তি চুক্তির দীর্ঘ দুই যুগের অধিক অতিক্রান্ত হতে চলেছে। এই দুই যুগে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক সরকার কি কি ধারা, উপধারা বাস্তবায়িত করেছে এবং কোন ধারা, উপধারা অবাস্তবায়িত রয়েছে সেগুলো তুলে ধরবেন কি?

 

অংগ্য মার্মা: পার্বত্য চুক্তিকে নিয়ে চুক্তি সম্পদনকারী উভয়পক্ষ সরকার ও জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পাহাড়ি জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।

 

একুশে সংবাদ.কম: ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার বলছেন, চুক্তি মোতাবেক অধিকাংশ ধারা-উপধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। শুধু কয়েকটি ধারা-উপধারা অবাস্তবায়িত রয়েছে। সেগুলোও জনসংহতি সমিতির সঙ্গে বসে আলোচনা সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চুক্তির অধিকাংশ ধারা-উপধারা অবাস্তবায়িত বলে দাবি করা হচ্ছে। আপনার মতে, চুক্তির ধারা-উপধারা বাস্তবায়নের মতামত কি?

 

অংগ্য মার্মা: সরকার ও জনসংহতি সমিতির পরস্পর বিপরীতমুখি বক্তব্য। বিশেষত চুক্তির ধারাকে নিয়ে এর মাধ্যমে সকলের কাছে পরিষ্কার যে, পাহাড়ে এই চুক্তির মাধ্যমে শান্তি ফিরে আসবেনা। হারানো জমি আমরা পাহাড়িরা ফিরে পাবোনা।

 

একুশে সংবাদ.কম: শান্তি চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘‘ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’’ এ পাসের পর আইন সংশোধনের ফলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আলোচনায় বসতে গেলে কিংবা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে চাইলে অউপজাতীয়দের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) কেন এর বিরোধীতা করেন। অতএব, চুক্তি মোতাবেক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কিভাবে স্থায়ী সমাধান করতে পারবেন এর বিকল্পপথ আছে কিনা আপনি কি মনে করেন?

 

অংগ্য মার্মা: সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের নায্য মৌলিক দাবি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তরিক নয়, অন্য দিকে বিভিন্ন বেনিফিসিয়ারী গ্রুপ তৈরী করে পাহাড়িদের নায্য দাবি থেকে বঞ্চিত করে রাখতে চাইছে। পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার স্বীকৃতি ও সেটেলার বাঙালীদের সমতলে জীবিকার নিশ্চয়তাসহ পূর্ণবাসন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমি সমস্যার সমাধান করতে পারে।

 

একুশে সংবাদ.কম: চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪টি ব্রিগেড সেনাক্যাম্প স্থাপনে উল্লেখ সহ অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের বিধি-বিধান রয়েছে। আদৌ কি সরকার সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে নাকি সেনাক্যাম্প বৃদ্ধি করা হয়েছে?


   অংগ্য মার্মা: নতুন সেনাক্যাম্প সম্প্রসারণই অদ্বিতীয় প্রমাণ শান্তি চুক্তির ধারা লঙ্ঘন।

 

একুশে সংবাদ.কম: সাম্প্রতিক ‘‘কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’’(কেএনএফ)-কে বিভিন্ন মিডিয়ায় জনসংহতি সমিতি(সন্তু গ্রুপ) ও ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(প্রসিত গ্রুপ)-র সঙ্গে সংপৃক্ততা রয়েছে বলে প্রচারণা করা হয়। আসলে এর সত্যটা আপনার ব্যক্তিগত মতামত কি?

 

অংগ্য মার্মা: পাহাড়িদের নায্য দাবি থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য সরকার ও সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গ্রুপ তৈরী করছে। আসল কথা হলোঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪টি রাজনৈতিক দল নয়, ২ টা দল। ১ম দলটি হলো আপোষকামী ধারা (জেএসএস- সন্তু, জেএসএস- সংস্কার ও মূখোশ, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফ) আর ২য় দলটি হলো আপোষহীন সংগ্রমের পাহাড়িদের পূর্ণশায়ত্ত্বশাসনধারী পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক মুল ধারা আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড ‍পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।

 

একুশে সংবাদ.কম: পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের প্রধান আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে ৪টি দলে বিভক্ত। ফলে অর্ন্তকোন্দলে সংঘাত, অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজি, গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।  আপনার মতে, এই ৪টি দল আদৌ কি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পূর্বের অবস্থানে ফেরার পরিকল্পনা আছে কিনা? পাহাড়িদের এই অর্ন্তকোন্দলের সংঘাতের স্থায়ী সমাধান হবে কিনা?

 

অংগ্য মার্মা: যতদিন সরকার ও সেনাবাহিনী সাম্প্রদায়িক ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গ্রুপ গুলোকে আশ্রয়- প্রশ্রয় দেবে ততদিন পর্যন্ত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করা সহজ হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক দল ও জনগণের এই ষড়যন্ত্র নশ্যত করতে পারে।

 

একুশে সংবাদ.কম: পরিশেষে একুশে সংবাদ.কম কে আপনার মুল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি ২৫ বছর পুর্তির উদযাপন সার্থকতা হউক সেই প্রত্যাশা করছি। ধন্যবাদ।

 

অংগ্য মার্মা: কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তির বিষয়ে সরকার ও দেশের মানুষকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। আমরা চাই পাহাড়িদের নায্য দাবি মেনে নিয়ে সরকার পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করুক এবং সেই দাবি জানাচ্ছি সরকারে প্রতি।

 

আপনার নিউজ মিডিয়াকে আবারো ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দৈনিক একুশে সংবাদ.কম এর উন্নতি কামনা করছি। ধন্যবাদ ভালো থকেবেন।  

 

একুশে সংবাদ/পলাশ

Link copied!