আদালত কক্ষে লোহার খাঁচা বসানো কেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১, ৩২ ও ৩৫ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং কেন লোহার খাঁচার পরিবর্তে কাঠগড়া পুনঃস্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হবে না এ মর্মে ৪ সপ্তাহের একটি রুল জারি করেছেন আদালত। এছাড়াও সারা দেশে কোন কোন আদালতে এই ধরনের লোহার খাঁচা বিদ্যমান আছে সে বিষয়ে একটি তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আইন সচিবকে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণ চেয়ে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়। রিটের পক্ষের আইনজীবী হলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচার অপসারণ করতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্টের দশ আইনজীবী।
তারা হলেন-জি এম মুজাহিদুর রহমান, মুহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ নোয়াব আলী, আজিমুদ্দিন পাটোয়ারী, মোহাম্মদ সাজ্জাদ সারোয়ার, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মোহাম্মদ মিজানুল হক ও আবদুল্লাহ সাদিক।
রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আইন সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবরে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, দেশের বেশিরভাগ আইন ও আদালতের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি। আদালতে আসামি হাজিরার জন্য কাঠগড়ার প্রচলন ব্রিটিশ আমলেই শুরু হয়। তবে দুর্ধর্ষ আসামি, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করানো হতো। বিচার শেষে দোষীকে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে এমন ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু বিচার চলাকালীন আদালতে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। ভারতেও সাধারণ আদালতের কাঠগড়ায় লোহার খাঁচার ব্যবহার নেই।
নোটিশে আরও বলা হয়, দেশি-বিদেশি আইন, আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান ও উচ্চ আদালতের নজিরসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায় আদালতে কাঠগড়ার পরিবর্তে লোহার খাঁচার ব্যবহার অমানবিক, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ, আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান ও Principle of presumption of innocence -এর পরিপন্থী। মানুষের স্বাভাবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আদালতে লোহার খাঁচার অপসারণ একান্ত প্রয়োজন।
সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদসহ আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান অনুযায়ী মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নোটিশ পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচার অপসারণ করার অনুরোধ করা হয়। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় এ রিট দায়ের করা হলো।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :