গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে গুম কমিশন। গুম কমিশনের দেয়া রিপোর্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
শুনানি শেষে তিনি বলেন, গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে গুম কমিশন। গুম কমিশনের দেয়া রিপোর্ট ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি ছিলেন জুলাই-আগস্ট গণহত্যার নিউক্লিয়াস। তার বিরুদ্ধে আনা তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আর তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের অগ্রগতি আইজিপির কাছে জানতে চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে জুলাই-আগস্টে ‘হত্যা-গণহত্যার’ মামলায় গ্রেফতার আওয়ামী লীগে সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ মোট ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে গোলাম দস্তগীর গাজীকে একটি প্রিজনভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আনা হয়। জানা গেছে, বিভিন্ন কারাগার থেকে একে একে সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টা, আমলা, বিচারপতি ও রাজনীতিবিদসহ ১৬ জনকে আদালতে আনা হয়।
এর আগে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষ করে আজ প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। তবে আজ আবারও দুই মাস সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
তাদের মধ্যে আছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলাম। আরও আছেন সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
২৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিবসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৮ নভেম্বর সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
প্রসঙ্গত-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :