বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্ট আজ (১৬ মার্চ ২০২৫) রায় ঘোষণা করেছেন। এতে নিম্ন আদালতের দেয়া সাজা বহাল রাখা হয়েছে। ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ আসামির দণ্ড বহাল থাকলো এবং যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৫ আসামির সাজাও বহাল রাখা হয়েছে।
রোববার (১৬ মার্চ) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন, নূর মোহাম্মদ আজমী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ উপস্থিত ছিলেন।
আসামিপক্ষে আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী, আজিজুর রহমান দুলু উপস্থিত ছিলেন। আদালতকক্ষে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী মতামত প্রকাশ করায় তাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ হয়।
মামলার অগ্রগতি,২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।তদন্ত শেষে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ আসামিদের রায় ঘোষণা করে— ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করে, পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে।
হাইকোর্ট বলেন, "এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।""আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য বেদনাদায়ক। এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।"
পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ,আসামিরা চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন।মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হলো বলে মনে করছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।
একুশে সংবাদ//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :