জুলাই গণহত্যা মামলার বিচারের জন্য পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা ও আসামির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিচারকার্য দ্রুত সম্পন্ন করতে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া, তদন্ত কার্যক্রমে গতি আনতে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনে জনবল বাড়ানোর বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
সোমবার (২৪ মার্চ) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টের মামলার সংখ্যা বেড়েছে, আসামির সংখ্যা বেড়েছে। এ কারণে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। এ ছাড়া তদন্তে গতি আনতে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনে জনবল বাড়ানোর কথাও ভাবছে সরকার।
এ সময় দক্ষ জনবল নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ট্রাইব্যুনাল।
পরে ২০১৬ সালে কল্যাণপুরে জাহাজ বাড়িতে জঙ্গি সাজিয়ে ৯ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক এসপি জসিম উদ্দিন মোল্লাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৭ মে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মিরপুরে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে দারুসসালাম জোনের সাবেক এডিসি এম এম মইনুল ইসলামসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আগামী ১৮ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক ছাত্রকে গুলির ঘটনায় সাবেক এসআই চঞ্চল চন্দ্র ও সাবেক এসি রাজেন কুমার সাহাসহ এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আগামী ২৮ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
এর আগে সকালে জঙ্গি সাজিয়ে ৯ জনকে গুলি হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক এসপি জসিম উদ্দিন মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এদিকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে দারুসসালাম জোনের সাবেক এডিসি এম এম মইনুল ইসলাম ও রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক ছাত্রকে গুলির ঘটনায় সাবেক এসআই চঞ্চল চন্দ্র ও সাবেক এসি রাজেন কুমার সাহাকেও হাজির করা হয়।
২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডসংলগ্ন ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিং নামের একটি বাসায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের অভিযানে নয়জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছেন বলা হয়। ওইদিন অভিযান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক। তিনি বলেছিলেন, নিহত ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। ওই বাড়ি থেকে গুলশানের মতো বড় হামলার পরিকল্পনার তথ্য পুলিশের কাছে আগে থেকেই ছিল।
তবে, মামলার অভিযোগে ওই জঙ্গি অভিযানকে নাটক এবং নিহত ৯ জনকে ইসলামী মনোভাবাপন্ন যুবক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৬ মার্চ এ মামলায় সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হকসহ সাবেক তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অন্য দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন– ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া ও ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্যা। জুলাই গণহত্যার অপর দুই মামলায় অন্য তিনজনকে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একুশে সংবাদ/আ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :