আগামীকাল ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। বাঙালিদের ঈদুল ফিতরের আনন্দের মধ্যেই এলো আরেক পার্বণ বৈশাখী উৎসব। ঈদে পোলাও-মাংস খাওয়া হয়েছে সবারই। এবার বৈশাখী আয়োজনে নানা পদের ভর্তা রাখতে পারেন গরম ভাত কিংবা পান্তা ভাতের সঙ্গে। নানা পদের ভর্তার রেসিপি নিয়ে একুশে সংবাদের আয়োজনের সাথে আপনিও থাকুন।
প্রথমেই একটি প্যানে এক টেবিল চামচ তেল দিয়ে অল্প আঁচে শুকনা মরিচ ভেজে নিন। ধীরে ধীরে ভাজবেন মচমচে করে। মরিচ উঠিয়ে রসুনের কোয়া ভেজে নিন নরম করে। এরপর পেঁয়াজ কুচি ও আস্ত কাঁচা মরিচ ভাজুন। এগুলো দিয়েই তৈরি হবে নানা ধরনের ভর্তা।
১। ডাল ভর্তা তৈরির জন্য প্যানে মসুরের ডাল নিন। এর সঙ্গে পরিমাণ মতো পানি, অল্প হলুদের গুঁড়া ও লবণ দিন। পানি এমনভাবে দেবেন যেন সেদ্ধ হতে হতে সম্পূর্ণ পানি টেনে শুকনা হয়ে যায়। ভেজে রাখা শুকনা মরিচ ভেঙে গুড়া করে নিন। এর সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ কুচি, দুটি ভাজা কাঁচা মরিচ, ২ কোয়া রসুন, ধনিয়া পাতা কুচি ও সরিষার তেল সঙ্গে মেখে নিন। প্রয়োজন মতো লবণ দিয়ে মেশান। শেষে সেদ্ধ ডাল দিয়ে মিশিয়ে নিন।
২। ডিম ভর্তা তৈরির জন্য ভেজে রাখা শুকনা মরিচ লবণ দিয়ে ডলে ভেঙে নিন। এর সঙ্গে মেশান ভেজে রাখা পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ। সবকিছু ভালো করে মিশিয়ে নিন। ধনিয়া পাতা কুচি ও দুটো সেদ্ধ ডিম মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজাদার ডিম ভর্তা।
৩। শুঁটকি ভর্তা করে নিন এবার। এজন্য দেড়শ গ্রাম লইট্টা শুঁটকি বড় টুকরা করে কেটে বলক ওঠা পানিতে দিয়ে দিন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন পাত্র। ৫ মিনিট সেদ্ধ করার পর পানি থেকে উঠিয়ে মাঝের কাঁটা বের করে নিন। প্যানে সরিষার তেল দিয়ে মাছগুলো ভেজে নিন। মাছ উঠিয়ে একই প্যানে আরও খানিকটা সরিষার তেল দিয়ে কয়েকটি শুকনা মরিচ ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে উঠিয়ে ১/৩ কাপ পেঁয়াজ কুচি ও ১ চা চামচ কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে দিন। পেঁয়াজ হালকা নরম হয়ে আসলে আধা চা চামচ আদা বাটা, ১/৪ চা চামচ রসুন বাটা, আধা চা চামচ মরিচের গুঁড়া, ১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, ১/৪ চা চামচ জিরার গুঁড়া ও স্বাদ মতো লবণ দিয়ে দিন। সামান্য পানি দিয়ে কষিয়ে তুলে রাখুন মসলা। এবার স্বাদ মতো লবণ দিয়ে শুকনা মরিচ ভেঙে নিন। ভেজে রাখা পেঁয়াজের মিশ্রণের সঙ্গে ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে নিন। সব শেষে ভেজে রাখা শুঁটকি ভেঙে মিশিয়ে নিন।
৪। রসুনের ভর্তা করার জন্য ভেজে রাখা রসুন চটকে নিন। এর সঙ্গে মেশান ভাজা শুকনা মরিচ, ভেজে নেওয়া পেঁয়াজ, ভাজা কাঁচা মরিচ, সরিষার তেল ও লবণ। সব উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিন।
৫। টাকি মাছের ভর্তা করার জন্য মাছ ভালো করে পরিষ্কার করে হলুদ, মরিচের গুঁড়া ও লবণ মেখে সেদ্ধ করে নিন। পানি ঝরিয়ে মাছের কাঁটা বাছুন। পাত্রে সরিষার তেল গরম করে রসুন ও পেঁয়াজ কুচি হালকা করে ভেজে নিন। কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা ও লবণ দিয়ে নেড়ে নামিয়ে বেছে রাখা মাছের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। লেবুর রস, লেবুর খোসা গুঁড়া ও লেবুপাতা কুচি দিয়ে পছন্দ মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
৬। একটু ভুনা স্টাইলে আলু ভর্তা বানিয়ে ফেলতে পারেন। ২ টেবিল চামচ তেল গরম করে কিছুটা পেঁয়াজ কুচি হালকা সোনালি করে ভেজে নিন। লবণ, হলুদ, সরিষা বাটা ও শুকনা মরিচের গুঁড়া দিয়ে মিনিট খানেক কষিয়ে নিন। এবারে সেদ্ধ চটকানো আলু দিয়ে কিছুক্ষণ ভুনে নামিয়ে নিন।
৭। আলু ভর্তা তৈরি করতে পারেন আরও একটি স্বাদে। এটি তৈরি করতে ভেজে রাখা কাঁচামরচি, স্বাদ মতো লবণ, ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুচি ও ২ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি দিয়ে ভালো করে চটকে নিন। এবার সেদ্ধ করা ডিম ও আলু এবং ১ চা চামচ সরিষার তেল দিয়ে সব ভালোভাবে মেখে নিন। হয়ে গেল মজাদার ডিম-আলু ভর্তা।
৮। যেকোনো বড় মাছ দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন মজাদার মাছ ভর্তা। একটি প্লেটে আধা চা চামচ লবণ, আধা চা চামচ মরিচের গুঁড়া ও ১ চিমটি হলুদের গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মাছের দুটি টুকরা মসলায় মেখে নিন। ভর্তার জন্য সবসময় মাছের পিঠের অংশ নেবেন। মাছ মসলায় ম্যারিনেট করে রাখুন কিছুক্ষণ।
প্যানে ৩ টেবিল চামচ তেল দিন। তেল গরম হলে মাছ দিয়ে দিন। দুই দিক ভালো করে ভেজে নিন। ভাজা মাছ থেকে কাঁটা বেছে নিন। একই প্যানে তেল গরম করে শুকনা মরিচ ভেজে নিন। মরিচ ভাজা হলে উঠিয়ে একই প্যানে দিয়ে দিন মোটা করে কাটা পেঁয়াজ। রসুনের একটি কোয়া রেখে বাকি কোয়া কুচি করে দিয়ে দিন পেঁয়াজের মধ্যে। নাড়তে থাকুন। কিছুটা ভাজা ভাজা হলে আদা কুচি দিন। সব উপকরণ নেড়েচেড়ে ভেজে নিন মাঝারি আঁচে।
কাঁটা বেছে রাখা মাছ দিয়ে দিন প্যানে। নাড়ার সময় মাছ ভেঙে দেবেন। কিছুক্ষণ পর সরিষার তেল দিন। ভাজা ভাজা হলে নামিয়ে ফেলুন।
প্লেটে লবণ দিয়ে ভেজে রাখা শুকনা মরিচ ডলে নিন। রেখে দেওয়া রসুনের কোয়া কুচি ও সামান্য আদা কুচি দিন। সরিষার তেল দিয়ে সবকিছু মেখে নিন। চুলা থেকে নামানো ভাজা মাছ দিয়ে মেখে নিন। ধনেপাতা কুচি ছিটিয়ে পরিবেশন করুন গরম ভাতের সঙ্গে।
৯। টমেটো ভর্তা তৈরির জন্য টমেটো মাঝখান থেকে অর্ধেক করে নিন। প্যানে সামান্য সরিষার তেল দিয়ে টমেটোর টুকরা দিয়ে দিন। টমেটোর ভেতরের অংশ প্যানে থাকবে। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে সেদ্ধ করুন টমেটো। চামচ দিয়ে চাপ দিলে যখন গলে যাবে টমেটো এবং পোড়া দাগ হয়ে যাবে, তখন নামিয়ে নিন। একটি বাটিতে সরিষার তেলের সঙ্গে ভেজে রাখা শুকনা মরিচ ও রসুন ডলে নিন। পেঁয়াজ কুচি ও ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে নিন। টমেটো দিয়ে সব উপকরণ ভালো করে চটকে বানিয়ে ফেলুন ঝাল ঝাল টমেটো ভর্তা।
১০। ভিন্নরকম বেগুন ভর্তা করতে পারেন। এজন্য ৪০০ গ্রাম লম্বা বেগুন ছোট টুকরা করে কেটে ২০০ মিলি পানিতে সেদ্ধ বসান। ১ চিমটি লবণ ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে দিন প্যান। সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে রাখুন। আরেকটি প্যানে সরিষার তেল গরম করে শুকনা মরিচ ভেজে নিন কয়েকটা। ভাজা হয়ে গেলে মরিচগুলো উঠিয়ে দুটো পেঁয়াজ কুচি করে দিয়ে দিন একই তেলে। কাঁচা মরিচ কুচি ও একটি রসুনের আস্ত কোয়াগুলো আলাদা করে দিয়ে দিন। নেড়েচেড়ে ভাজুন। পেঁয়াজ নরম হয়ে গেলে সেদ্ধ করে রাখা বেগুন দিয়ে দিন। ভালো করে নেড়ে ভাজা ভাজা করে নিন বেগুনের মিশ্রণ। লবণ ও সরিষার তেল দিয়ে ভেজে রাখা শুকনা মরিচ ভেঙে নিন। পেঁয়াজ কুচি ও ধনেপাতা কুচি মেশান। এবার ভেজে রাখা বেগুনের মিশ্রণ মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজাদার বেগুন ভর্তা।
একুশে সংবাদ/বা.ট্রি / এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :