২০২৪ সালের পহেলা বৈশাখ। তাপদাহ চলছে বাংলাদেশের প্রায় জেলায়। এখন প্রচন্ড গরমে হাঁসফাস করছে সব বয়সী মানুষ। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
হিট স্ট্রোককে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। কেউ যেন হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত না হয়। এ ব্যাপারে কিছু বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।
কী এই হিট স্ট্রোক?
প্রচন্ড দাবদাহে যে সকল স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয় তন্মধ্যে হিট স্ট্রোক অন্যতম। হিট স্ট্রোক একটি জরুরি মেডিক্যাল অবস্থা। এতে দ্রুত ও সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে বড় ধরনের ক্ষতি এমন কী মৃত্যুও হতে পারে। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। দেহের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি (১০৪ ফারেনহাইট) হয়ে গেলে মারাত্মক হিট স্ট্রোকের আশংকা থাকে। আবার তাপমাত্রা বেড়ে ১০৬ ফারেনহাইটের কাছাকাছিও যেতে পারে!
কারা আক্রান্ত হতে পারেন?
• সাধারণত ৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধরা যাদের গরম সহনীয় ক্ষমতা কম।
• কিডনি, হার্ট, লিভার, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তরা।
• যথেষ্ট পানি পান করে না এমন লোকজন অথবা যাদের যাদের শরীর খুব দুর্বল।
• যারা অত্যধিক পরিমাণে মদ্যপান, ধূমপান বা নেশা করেন।
• কিছু বিশেষ ওষুধ (অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যাসপিরিন, মানসিক রোগের ওষুধ) গ্রহণকারীরা।
• ক্রীড়াবিদ, ব্যায়ামবিদ এবং প্রচন্ড রোদে কাজ করেন এমন লোকেরা।
• যাদের ওজন বেশি অথবা যাদের ওজন অনেক কম।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো
• হিট স্ট্রোকের লক্ষণ অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের কিছু লক্ষণের মত হয়ে থাকে।
• হিট স্ট্রোকের প্রধান কারণ পানিশূন্যতা এতে দেহে পরিমাণ কমে যেতে পারে।
• শরীরের তাপমাত্রা প্রচন্ডভাবে বেড়ে যায় (১০৪ ডিগ্রি ফারেন হাইট বা তারও বেশি হতে পারে)।
• ঘাম না হওয়া এবং ত্বকের বর্ণ লালচে হওয়া।
• নিঃশ্বাস দ্রুত হয়, মাংসপেশির খিঁচুনি হয়।
• হৃদ স্পন্দন দ্রুত বা ক্ষীণ হয়।
• শরীরে রক্তচাপ কমে যায়।
• বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়।
• প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
• হাত পা কাঁপে বা খিঁচুনি হতে পারে।
• তীব্র মাথাব্যথা, ঘোরা বা ঝিমঝিম করে।
• ত্বক লাল, গরম, এবং শুষ্ক হয়।
• কথা-বার্তা ও ব্যবহারে অস্বাভাবিকতার প্রকাশ পায়।
• পেশী দুর্বল এমনকি পুরো শরীর নিস্তেজ হতে পারে।
• এক পর্যায়ে ব্যাক্তি কোমা বা শকে চলে যেতে পারে।
হিট স্ট্রোক হলে কী করবেন?
• আক্রান্ত ব্যাক্তির তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্রথমে ঠাণ্ডা বা বরফ পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন
• আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে, পা উঁচু করে দিন
• এয়ারকন্ডিশন রুমে আনুন বা ফ্যান ছেড়ে দিন অথবা শীতল পরিবেশে আনুন
• বরফ বা ঠান্ডা পানি ভেজানো কাপড় দিয়ে রোগীর বগল, কুঁচকি, ঘাড়সহ নানা স্থান মুছে দিন
• শরীরে ব্যবহৃত কাপড়, মোজা যথাসম্ভব খুলে বা হালকা করে দিন
• ডাবের পানি, ঠাণ্ডা পানি, ফলের শরবত অথবা স্যালাইন খাওয়ান
• থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপুন। ১০১-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নেমে না আসা পর্যন্ত তাকে ঠান্ডা দেওয়া অব্যাহত রাখুন।
• যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিন।
হিট স্ট্রোক এড়াতে হলে
• প্রবল সূর্যালোক থেকে এরিয়ে থাকুন।
• সুতি, সাদা বা হালকা রঙ্গের ঢিলে ঢালা জামা-কাপড় পড়ুন।
• রোদে কাজ করতে হলে ছাতা বা মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করুন।
• গরমের সময় ভারী শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
• সম্ভব হলে খোলা হাওয়ায় কাজ করুন।
• কাজের ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করুন।
• দিনে কমপক্ষে দু’তিনবার গোসল করুন।
• সারাদিনে কমপক্ষে ৩ লিটারের বেশি ঠান্ডা পানি পান করুন।
• ফলের রস, লবন চিনির লেবুর শরবত মাঝে মাঝে খান।
• তেল ও মশালাদার খাবার যথাসম্ভব এরিয়ে চলুন।
• খাবারে প্রচুর শাক-সবজি আর ফল রাখুন।
• যথাসম্ভব ধুমপান, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন এরিয়ে চলুন।
• ভ্রমনে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
গরমের এ সময়ে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। বেশি বেশি তরল বা ঠান্ডা খাবার খেতে হবে। রাস্তার পাশের খোলা কাটা ফল, শরবত বা ভেজাল খাবার খাওয়া ঠিক নয়। গরমে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
একুশে সংবাদ/এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :