মানুষ অনেক কারণে মানসিক চাপে পড়ে। সেটা হতে পারে পারিবারিক বা সামাজিক অথবা ব্যক্তিগত কারণে। আত্নবিশ্বাস মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সেই আত্নবিশ্বাসে যখন টান পড়ে, তখন মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
মানসিক বিষণ্নতা থেকে রক্ষা পেতে মানুষ কতই কিছুই না করে। এই সময় প্রয়োজন পরিবার, বন্ধু আর কাছের মানুষের সহযোগিতা। অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া মনে করেন, মানসিক চাপের সঙ্গে আপাত দৃষ্টিতে শুধু মানসিক স্বাস্থ্য সংযুক্ত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে আরও তিনটি স্বাস্থ্যের যোগসূত্র আছে। যেমন–
প্রথমটি হল শারীরিক স্বাস্থ্য: এই ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ঘুম, সুষম খাদ্য, ব্যয়াম ইত্যাদি মানসিক চাপ কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
দ্বিতীয়টি হল সামাজিক স্বাস্থ্য: ইদানিং যে পরিমাণ ট্রল ফেসবুক খুললে দেখা যায়, তাতেই বোঝা যায় কী পরিমান নেতিবাচক চিন্তা মানুষের মনকে কলুষিত করছে। বর্তমান সমাজ পরিবর্তিত হয়ে ক্রমাগত এমন একটি সমাজে পরিণত হচ্ছে যেখানে কিশোর গ্যাং এর আবির্ভাব ঘটছে। কাজেই সমাজকে সুস্থ না করলে মানসিক চাপ কমানো কখনোই সম্ভব হবে না।
তৃতীয় এবং শেষ অংশটি হলো আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য: ধর্মীয় চেতনা এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের মধ্যে একটি ওভারল্যাপিং জায়গা থাকলেও দুটো আলাদা। আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের এক নম্বর অর্থ হচ্ছে নিজের সঙ্গে নিজের আন্তঃসম্পর্ক কেমন তা উপলদ্ধি করা। আমরা প্রত্যেকটি মানুষ কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করেছি আমি কেন এসেছি? আমার জীবনের উদ্দেশ্য কি? আমাকে আসলে কোন প্রয়োজন আছে এই পৃথিবীর? এই উত্তরগুলো যখন নেতিবাচক হয়ে যায়, তখন নিজের কাছে নিজের পৌঁছানোর সেতুটি আমরা ভেঙে ফেলি। তখন আমরা হীনমন্যতায় ভুগি।
এবার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের দুই নম্বর অর্থ হচ্ছে নিজের সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক। তা হতে পারে মানুষ, অন্যান্য প্রাণী এবং প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক। ইদানিং অনেক বেশি পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, প্লাস্টিকের প্যাকেটটি যদি ময়লা ফেলার বিনে ফেলি, অথবা তীব্র দাবদাহে বারান্দায় ছোট্ট একটা বাটিতে পানি রাখি তাহলে আমাদের নিজেদের সঙ্গে অন্যদের যোগাযোগের সেতুটা অনেক শক্তিশালী হয়।
আধ্যাত্বিক স্বাস্থ্যের তিন নাম্বার জায়গাটা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে পরিস্থিতি বা সময়ের সম্পর্ক। আমরা নিজেদের সঙ্গে সময়ের প্রয়োজনে উপযুক্ত আচরণ করতে পারছি কিনা? প্রতিবাদ করার সাহস রাখি কিনা, অন্যথায় সময়ের প্রয়োজনকে চিনতে ভুল করলে মানসিক চাপ কখনোই কমবে না।
আক্কেল দাঁত আসলে কী? এই দাঁত কি ভয়ের কারণ?আক্কেল দাঁত আসলে কী? এই দাঁত কি ভয়ের কারণ?
আসুন জেনে নিন, মানসিক চাপ কমিয়ে সুস্থ থাকার কিছু উপায়।
১. এই সময় মন থেকে নেতিবাচক ভাবনা দূরে ফেলে দিন। প্রতিদিন ভালো কোনো কাজ করার চেষ্টা করুন।
২. চলার পথে ভুল হতেই পারে। তাই নিজের সমালোচনা গ্রহণ করার মতো মানসিকতা তৈরি করুন।
৩. রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন, তাই সাধারণ বিষয় নিয়ে রেগে যাবেন না।
৪. প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৫. পরিবার,বন্ধু বা কাছের কাউকে নিজের কষ্টের কথা খুলে বলুন। এতে দেখবেন আপনি মানসিকভাবে শান্তি পাচ্ছেন।
৬. মানসিক অস্থিরতা কমাতে মেডিটেশন করতে পারেন। বুক ভরে শ্বাস নিন।
৭. শুনতে পারেন পছন্দের কোনো গান। এ ছাড়া বই পড়ুন, ছবিও আঁকতে পারেন।
৮. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মনে মনে এক থেকে দশ গুনে নিন। দেখবেন কিছুটা আরাম পাবেন।
৯. সমস্যা সমাধানে কারণ খুঁজে বের করুন। এ সময় মাথায় ঘুরতে থাকা চিন্তা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যার চেষ্টা করুন।
১০. যদি দেখেন সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। তখন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :