ক্ষণে ক্ষণে আকাশের রূপ বদলায় যে ঋতুতে, সেটিই শরৎ। এই স্বচ্ছ নীল আকাশে ঝকঝকে রোদ তো এই সাদা মেঘ। অথবা ঈশান কিংবা নৈর্ঋতে কোণে দেখা দেওয়া কালো মেঘ। উত্তরে লিলুয়া বাতাস উড়িয়ে নিতে চায় যেন সবকিছু। নেয়ও কখনো কখনো। নীল, সাদা, সবুজ আর এলিয়ে পড়া সোনালি রঙের বৈচিত্র্য ছুঁয়ে থাকে প্রকৃতি। এই রঙের প্রভাব থাকে এ সময়ের পোশাকে। তার চেয়েও বড় কথা, ঋতুর সঙ্গে বদলে যায় ফ্যাশনের ট্রেন্ড।‘বর্তমানে ঋতুভিত্তিক পোশাকের আলাদা ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। ঋতুর সঙ্গে মানুষ নিজের ফ্যাশন পরিবর্তন করতে ভালোবাসে।’
কেমন সুতার কেমন পোশাক: এ সময় আবহাওয়া থাকে ভ্যাপসা। তাই সিনথেটিকের বদলে সুতি, ভয়েল, লিনেন কিংবা তাঁতে বোনা কাপড়ে অনায়াসে আরাম খুঁজে পাওয়া যাবে। হালকা রঙের প্রাধান্য থাকতে পারে পোশাকে। যেমন নীল, আকাশি, সাদা, ধূসর, সোনালি কিংবা সবুজ। এ ছাড়া ঢিলেঢালা পোশাকে পাওয়া যায় স্বস্তি। এখন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে শর্ট টপ, পেলাজ্জো প্যান্ট, স্কার্ট ও শার্ট। তবে অনুষ্ঠান কিংবা দাওয়াতে সময় বুঝে সিনথেটিক কাপড়ের পোশাক পরা যেতে পারে।
ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সৌমিক দাস জানিয়েছেন, এ আবহাওয়ায় প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য সুতির ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নেওয়া উচিত। তাহলে ভ্যাপসা গরমে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।
পোশাকের নকশা ও রং: শরৎকে কেন্দ্র করে ডিজাইনাররা তৈরি করে থাকেন থিমভিত্তিক পোশাক। শাড়ির আঁচল কিংবা সালোয়ার-কামিজের ওড়নায় দেখা যায় আকাশ, রংবেরঙের পাখি, লতাপাতা কিংবা কাশফুল। শরতের পুরো পরিবেশই যেন তুলে আনা হয় পোশাকে।
সৌমিক দাস জানিয়েছেন, শরতের পোশাকের নকশায় স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে শরতের শুভ্র আকাশের রং—নীল-সাদার সংমিশ্রণ। সঙ্গে আরও আসে বিভিন্ন শেডের নীল, আকাশি, নীলাভ ধূসর রং। গরমের প্রকোপ থাকায় কাপড় হয় সাধারণত সুতির। আর্দ্রতার কথা বিবেচনায় রেখে পোশাকের প্যাটার্ন হয় ঢিলেঢালা ও ক্যাজুয়াল।
সাজ ও ত্বকের যত্ন: এ সময়টা পোশাকের পাশাপাশি সাজ ও ত্বকের যত্নের প্রতি সতর্ক থাকা জরুরি। বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ারের স্বত্বাধিকারী শারমিন কচি জানান, শরতে মেকআপ ও ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে গরমের প্রাধান্য থাকে। বর্ষার শেষের দিকে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। ছত্রাকের সংক্রমণ ও অ্যালার্জির প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই ত্বক যাতে দীর্ঘ সময় কোনোভাবেই ঘামে ভিজে না থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
কর্মব্যস্ততার জন্য দিনে বেশির ভাগ মানুষেরই বাইরে থাকতে হয়। এতে গরমের কারণে শরীরে ঘাম জমে ছত্রাকের সংক্রমণ কিংবা অ্যালার্জি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঘরে ফিরে অবশ্যই ডাবল ক্লিনজিং করে ভালো মানের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। রাতে ডাবল ক্লিনজিং করার ফলে সকালে ফেসওয়াশ ব্যবহার না করে শুধু পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। রোদের তাপ থেকে ত্বক রক্ষা করতে অবশ্যই ঘর থেকে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভোলা যাবে না।
এ ছাড়া ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অ্যালোভেরা জেল কখনো সরাসরি মুখে দেওয়া উচিত নয়। এতে অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সে ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা থেকে জেল বের করে ডিপ ফ্রিজে রেখে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
শরৎ যেহেতু শুভ্রতার মাস, তাই মেকআপের ক্ষেত্রে কিছুটা শুভ্রতা রাখা জরুরি। খুব ভারী মেকআপ এ সময় এড়িয়ে চলাই ভালো। মুখে দাগ থাকলে কনসিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। মুখে অতিরিক্ত তেল যাতে না জমে, সে জন্য ফেস পাউডার ব্যবহার করলে ভালো হয়। এরপর পিচ কিংবা হালকা পিংক ব্লাশন দিয়ে বেজ মেকআপের ইতি টানতে হবে।
দিনে চোখের সাজ খুব ভারী না করে নীল কাজল এবং মাসকারা ব্যবহার করতে পারেন। তবে রাতের সাজে নীল স্মোকি আই লুক করা যেতে পারে।
একুশে সংবাদ/আ.প./সাএ
আপনার মতামত লিখুন :