দেশে বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হচ্ছে। দেশের মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়সহ নানান ধরনের পেটের পীড়া, চোখ ওঠা রোগে। মশার ও সাপের উপদ্রবও বাড়ছে। এ সময় সতর্ক থাকবেন যেসকল রোগ থেকে তা হলো-
ডায়রিয়া : বানভাসির জন্য সবচেয়ে বেশি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় খাবার পানি। বিশুদ্ধ পানি পান না করার কারণে হতে পারে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়, হেপাটাইটিস। তাই পানি অবশ্যই ফুটিয়ে পান করতে হবে। একটি পরিষ্কার পাত্রে পানি সংগ্রহ করে প্রথমেই কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিন। তলানি পড়লে উপরের পরিষ্কার পানি আলাদা পাত্রে ঢেলে নিয়ে ফুটান। পানি ফুটতে শুরু করলে আরও ১০ মিনিট পর্যন্ত ফুটিয়ে পান করুন। তবে ছোট্ট শিশু ও গর্ভবতী মাকে এ পানি পান না করানো ভালো। তাদের জন্য বোতলজাত পানি পান করাতে হবে। ফুটানো সম্ভব না হলে কোরিনের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। এক গ্যালন পানিতে ১ কাপের চতুর্থাংশ ব্লিচিং পাউডার বা ফিটকিরি (৪-৬% কোরিনযুক্ত) দিয়ে ভালোভাবে মেশানোর পর ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করতে হবে। তলানি পরলে উপরের পরিষ্কার পানি পান করতে হবে। এছাড়া ট্যাবলেটের মাধ্যমেও পানি বিশুদ্ধ করা যায়। ১টি হ্যালোট্যাব ২০ লিটার পানিতে দিয়ে ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করার পর পানি পান করতে পারেন।
সাপে কামড় : বন্যার সময়কালীন যত মৃত্যু হয়, তার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে সাপে কাটা। বন্যার সময় সাপ নিজ আবাস হারিয়ে শুকনো স্থানে মানুষের সঙ্গে অবস্থান নেয়। এ জন্য সাপে কাটার পরিমাণ বেড়ে যায়। বিষহীন সাপে কাটলে ভয়ের কিছু নেই। তবে বিষধর সাপে কাটলে রোগীকে বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে নিতে হবে। যদি সাপে কাটা স্থানে দুটি বা একটি ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়, সেই সঙ্গে সাপে কাটা স্থানে তীব্র ব্যথা বা জ্বালা করা, স্থানটি ফুলে লাল হয়ে গেলে, রক্তিম রস ক্ষরণ হলে, ঘুম ঘুম ভাব, মাথাব্যথা ও মাথা ঝিম ঝিম করা, বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া, রক্ত বমি, দুর্বলতা, একটি জিনিস দুটি দেখা, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বুঝতে হবে বিষধর সাপে কেটেছে। কিন্তু যদি ছোট ছোট অস্পষ্টভাবে অনেকগুলো দাঁতের চিহ্ন দেখা যায়, তা হলে বুঝতে হবে সাপটি বিষহীন। প্রথমে সাপে কাটা রোগীকে বোঝাতে হবে ভয়ের কিছু নেই। সেই সঙ্গে সাহস জোগাতে হবে। দংশিত স্থান ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে আবৃত করে রাখুন। দংশিত স্থানের আশপাশে কাটাকাটি করবেন না, সুই ফোটাবেন না, রক্ত চুষে বের করবেন না। বিভিন্ন গাছ-লতাপাতার রস, গোবর লাগাবেন না। যদি কথা বলতে বা গিলতে সমস্যা দেখা দেয়, তবে কোনো কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। ওঁঝা-বৈদ্যের কাছে সময় নষ্ট না করে রোগীকে হাসপাতালে দ্রুত স্থানান্তর করুন। হাসপাতালে রোগীকে অ্যান্টিভেনাম, টিটেনাস প্রতিষেধক দিতে হবে।
চোখ ওঠা : বন্যার সময় ও পরে চোখ উঠলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ৪-৮ ঘণ্টা পর পর অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ যেমন কোরামফেনিকল দিতে হবে। কোনো ড্রপ একবার ব্যবহার করলে অন্য কেউ তা ব্যবহার করবেন না। পরিষ্কার হাতে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন। নোংরা-ময়লা পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করবেন না। চোখ ডলবেন না। অপরিষ্কার হাত চোখে লাগাবেন না। ঘুমানোর সময় যে চোখ উঠেছে সেই কাতে ঘুমান।
একুশে সংবাদ/আ.স./সাএ
আপনার মতামত লিখুন :