কলা অন্যতম এক জনপ্রিয় ফল। সহজলভ্যতা, পুষ্টিগুণ, এবং সুস্বাদু হওয়ার কারণে কলা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্যতম স্থান পেয়েছে। এ কলা বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান যেমন, ভিটামিন, খনিজ, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।এই উপাদানগুলো আমাদের দেহের বিভিন্ন কার্যকারিতাকে সমর্থন করে এবং সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। কলা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কলা খাওয়ার উপকারিতা-
১. পুষ্টিগুণে ভরপুর
কলায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি, ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩ গ্রাম ফাইবার, ১ গ্রাম প্রোটিন, এবং ১৪ গ্রাম চিনি থাকে। এছাড়া কলায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, এবং পটাসিয়াম যা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
কলায় উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের অন্যতম কারণ। নিয়মিত কলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৩. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
কলায় থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
৪. শক্তি বৃদ্ধি করে
কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে। তাই অনেকে একে `প্রকৃতির এনার্জি বার` বলেন। ব্যায়ামের আগে বা পরে কলা খেলে তাৎক্ষণিক এনার্জি পাওয়া যায়।
৫. মেজাজ ভালো রাখে
কলায় থাকে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি উপাদান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়। সেরোটোনিন হরমোন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং বিষণ্ণতা দূর করে। এছাড়াও, প্রতিটি কলায় গড়ে ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা মন ভালো রাখতে এবং ভালো ঘুম পাওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৬. ওজন কমাতে সহায়ক
কলায় ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি। ফলে এটি খেলে পেট ভরে যায় এবং ক্ষুধা কম লাগে। তাই যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য কলা একটি আদর্শ ফল।
৭. ত্বকের যত্নে
কলার মাখন ত্বকে লাগালে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। কলায় থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জৌলুস বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. কিডনি সুস্থ রাখে
কলায় পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়। এটিতে পটাশিয়ামের ধারাবাহিক উপস্থিতি দেওয়ার জন্য কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমিয়ে তোলে। কলার মাধ্যমে পটাশিয়াম এর স্বাভাবিক স্তর বজায় রাখা যায়, যা কিডনির স্বাস্থ্যকে ধারণ করে সাহায্য করে।
৯. রক্তস্বল্পতা দূর করে
কলায় থাকা আয়রন রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাড়ায়, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে। অ্যানিমিয়া হলে শরীরে ক্লান্তির অনুভূতি হতে পারে, এবং শ্বাসকষ্ট অনুভূতি করতে পারেন। কলা একটি অত্যন্ত উপকারী ফল যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আয়রন রক্তে লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে এবং ভিটামিন বি৬ রক্তে গ্লুকোজ মেটাবলিজমের প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।
১০. স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। তাই পড়াশুনার সময় বা যে কোনও মানসিক কাজে কলা খাওয়া উচিত।
১১. মানসিক চাপ কমায়
কলায় থাকা পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এটি নার্ভের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
১২. চুলের যত্ন
কলার পেস্ট চুলে লাগালে চুল মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। কলায় থাকা পটাশিয়াম এবং ভিটামিন চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
১৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
কলায় থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে, যা ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বিশেষ করে কলায় থাকা ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
১৪. হাড়ের শক্তি বাড়ায়
কলায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। নিয়মিত কলা খেলে হাড় মজবুত হয় এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে।
কলার স্বাস্থ্য উপকারিতা এত বেশি যে এটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত। এটি শুধু পুষ্টিকর নয়, এর রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিয়মিত কলা খেলে আমরা সুস্থ থাকতে পারি এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা উন্নত করতে পারি। তাই দৈনন্দিন অন্তত একটি করে কলা খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
একুশে সংবাদ/এ
আপনার মতামত লিখুন :