সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বয়স। সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে শরীরের কার্যক্ষমতা। অনেকেরই ধারণা ধীরে ধীরে শরীরের কার্যকারিতা কমতে থাকে। শরীরের কার্যকারিতা কমে যাওয়া ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে নির্দিষ্ট দুই বয়সে হুট করেই শরীরের কার্যকারিতার বেশ অবনতি হয়। সহজভাবে বললে, দুই বয়সে ‘শরীরের বয়স বেশি বাড়ে’। শরীর বেশি বুড়িয়ে যায়, দ্রুত ভেঙে পড়ে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল মেডিসিনের এক গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া যায়।
২৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ১০৮ জন নারী-পুরষের ওপর প্রায় ৭ বছর ধরে চালানো হয়েছে এই গবেষণা। প্রতি ৩ থেকে ৬ মাস পর পর তাঁদের শরীর থেকে বিভিন্ন প্রকার স্যাম্পল (রক্ত, লালা, কোষ, লোম) সংগ্রহ করা হয়েছে। শরীরের প্রায় দেড় লক্ষ অণু ও জীবাণুর ওপরেও চালানো হয়েছে গবেষণা। শরীরের কার্যকারিতা কেন কমে যায়, এ নিয়েই ছিল মূল গবেষণা।
সম্প্রতি ‘নেচার এজিং’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণার ফলাফল। সেখানে দেখা গিয়েছে শরীরে থাকা অণু এবং জীবাণুর কার্যকারিতা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে না। বরং দুটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে শরীরের বিভিন্ন অণু-জীবাণুর বেশ বড় পরিবর্তন দেখা যায়। যার প্রথমটি আসে ৪৪ বছর বয়সে আর দ্বিতীয়টি ৬০। অর্থাৎ এই দুই বয়সে মানুষ দ্রুত বুড়িয়ে যায়।
গবেষকদের মতে, ৬০ বছর বয়সে শরীরে রাতারাতি বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। বরং বয়স এবং কাজের চাপে শরীর ধীরে ধীরে নিজের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। শরীরের বাসা বাঁধে বিভিন্ন প্রকার রোগজীবাণু। সব মিলিয়ে ছয় দশক পেরিয়ে শরীরের বিভিন্ন অণু–পরমাণুর হঠাৎ পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। কিন্তু মধ্য-চল্লিশে শরীরের এমন পরিবর্তন অনেকটাই অবাক করেছে গবেষকদের। দেখা যাচ্ছে ‘চল্লিশেই চালশে’—কথাটা শুধু চোখের ক্ষেত্রেই নয়, শরীরের অন্যত্রও সত্য, নতুন করে যেন তার প্রমাণ পেলেন তাঁরা।
গবেষকদের প্রথম ধারণা ছিল, শরীরের এই বড় পরিবর্তনের পেছনে হয়তো মেনোপজের কিছুটা সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণ ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে নারীদের মেনোপজ হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যায় নারী-পুরুষ তথা লিঙ্গ নির্বিশেষে কম বেশি প্রত্যেকেরই এই সময়টায় শরীরে বেশ বড় পরিবর্তন আসে। শরীরের বিভিন্ন অণু-জীবাণুর কার্যকারিতাও কমতে থাকে এই সময়।
গবেষণায় যেসব অণু-জীবাণুর কথা বলা হয়েছে, তা মূলত ত্বক এবং পেশিকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া অতিরিক্ত কাজ, ক্যাফেইনের কারণেও এই পরিবর্তন আসতে পারে। মূলত ত্রিশের পর থেকেই শরীর ও মনের ওপর বিভিন্ন প্রকার চাপ পড়তে থাকে, যার প্রভাব পড়ে চল্লিশের মাঝামাঝি গিয়ে। আর ষাটের কাছাকাছি যেতে যেতে বেশির ভাগ মানুষই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। মনও শরীরকে ছাড় দিতে শুরু করে, যার প্রভাবে শরীরেও আসে বিশাল পরিবর্তন।
তবে গবেষক ডা. মাইকেল স্নাইডারের বিশ্বাস, চাইলেই নিজেদের জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে এই দুই বয়সে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার হার কমিয়ে আনতে পারি। সে জন্য প্রয়োজন মানসিকভাবে নির্ভার থাকা আর স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। আবার বিপরীতভাবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে এই বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে আসে।
একুশে সংবাদ/এসএস
আপনার মতামত লিখুন :