‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ গানের স্রষ্টা তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ২১ জুন, ১৯৯১ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা যান। বাংলাদেশের কবিতায় অবিসস্মরণীয় শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি স্বীকৃতি। স্বল্পায়ু জীবনে রুদ্র সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং তুমুল জনপ্রিয় হওয়া ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ ৫০টির বেশি গান রচনা ও তাতে সুরারোপ করেছেন।
তাঁর কবিতা মূলত সাম্যবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্যচেতনা ও অসাম্প্রদায়িকবোধে উজ্জ্বল। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন’—এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি উচ্চারণ করেছেন অবিনাশী স্বপ্ন ‘দিন আসবেই দিন সমতার’। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নটা।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৬ অক্টোবর, ১৯৫৬ সালে বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ ওয়ালীউল্লাহ, মা শিরিয়া বেগম। তাদের স্থায়ী নিবাস বাগেরহাট জেলার মংলা থানার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে, তবে পিতার কর্মস্থল ছিল বরিশাল। তার পিতা পেশায় ছিলেন চিকিৎসক।
নানাবাড়ির পাঠশালাতেই তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। এমনকি লেখালেখির আগ্রহও সৃষ্টি ঐ নানাবাড়ি থেকেই। ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি পাস করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন। চার বিষয়ে লেটার মার্ক্স পেয়েছিলেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ।
রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্মসম্পাদক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রথম আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ সংগীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রকাশনা সচিব। বিগত স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে রুদ্র সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।
এ ছাড়া ১৯৮০ সালে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারসহ জীবদ্দশায় বহু পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। অকাল প্রয়াত এই কবি ও সংগঠকের কর্মময় স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে ‘রুদ্র স্মৃতি সংসদ’।
‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পর পর দুই বছর ‘মুনীর চৌধুরী’ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন।
একুশে সংবাদ.কম/বিএস
আপনার মতামত লিখুন :