বরিশালের উজিরপুর এক প্রাচীন জনপদ। বাংলা ভাষার উন্মষলগ্নের প্রথম কবি মীননাথ (মৎসেন্দ্রনাথ) এ উপজেলার সন্তান ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে সুগন্ধা নদীবর্তী উজিরপুরের যোগীরকান্দা, মালিকান্দা, গালা এলাকায়ই মীননাথের বাস ছিল। তিনি যোগসাধনা করতেন। আর যোগ সাধনা থেকেই যোগীরকান্দা নামের উৎপত্তি বলে প্রতীয়মান হয়।
এ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এলাকায় একসময় ছিল কৃষি ও মৎস্য ব্যবসার পীঠস্থান। আজ থেকে (২০২৪) ৫০ বছর আগেও এলাকার প্রায় বাড়িতে ছিল ধান (মৌসুমে) ধান মলা, শুকানো, ঢেঁকিতে ভানার ধুমধাম। ধান দিয়ে যারা ব্যবসা করতেন তাদের বলা হতো ‘কুইড্যাল’।
ক.
"আয় ঝিঁঝিঁ আয়
তোর মায় তোরে থুইয়া
কলোই ভাজা খায়" (হস্তিশুণ্ড)
খ.
‘আয়লো ঝিঁঝিঁ আয়
মোগো বাড়ি আয়,
তোর মায় তোরে থুইয়া
ডাইল-কলোই ভাজা খায়’ (উত্তর মোড়াকাঠি)
শব্দ পরিচিতি :
ঝিঁঝিঁ= এক ধরনের পোকা-বিকেল হলেই তারা ডাকে। মোগো=আমাদের, থুইয়া= রেখে, কলোই ডাল/খেসারি= এক প্রকার ডাল।
প্রেক্ষাপট :
১৯৭১ সালের আগে এবং পড়ে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্যাপকভাবে কলোই চাষ দেখা গেছে উজিরপুর এলাকায়। বাড়ির উঠোনে থাকতো কলোই স্তূপাকারে রাখা। কলোই/কলাই, মুসুরি, সরিষা প্রতিটি বাড়ির উঠানে রাইশ (স্তূপ) দেওয়া থাকতো। এবং ধীরে ধীরে তা প্রক্রিয়াজাত করা হতো। কলোইর ডাল গাছসহ রাখা হতো। অন্যরকম এক ঘ্রাণে গ্রাম করতো মৌ মৌ। সন্ধ্যা হলে কানে বাজতো ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা গান। এখন ২০২৪ সালে উজিরপুরের গ্রামে কলোই চাষ ব্যাপকভাবে আছে কিনা জানা নাই। ২/১ জন কৃষক হয়তো নিজের প্রয়োজনে অল্পস্বল্প চাষ করে। তবে উজিরপুর এলাকায় ব্লক সিস্টেমে ইরি চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরিষা, কলোই, মুসুরি ডাল চাষ উঠে যাচ্ছে।
কলোই মৌসুমে সন্ধ্যা হওয়ার মুহূর্তে একটা টিনের প্লেটে লাঠি দিয়ে টুনটুন করে/মাঝে মাঝে নারিকেলের ২টি আইচা দিয়ে শব্দ করতো বাড়ির ছেলে-মেয়েরা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই- ঝিঁঝিঁ পোকা ধরা।
তখন বলা হতো--
সংগ্রহকারী : কামরুন নাহার লাকি
সংগ্রহস্থান : হস্তিশুন্ড, বামরাইল, উজিরপুর, বরিশাল
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :